হার্দিক পান্ডিয়ার দোষ কোথায়?

|

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) সবচেয়ে সফল দল চেন্নাই সুপার কিংস ও মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। দুই দলই সমান ৫ বার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তবে লিগের অন্যতম সফল দল মুম্বাইয়ের এবারের আসরের শুরুটা একেবারেই ভালো হয়নি। টানা তিন ম্যাচে হেরে দশ দলের মধ্যে সবার নিচে অবস্থান তাদের।

আইপিএলের শুরুর দিকে মুম্বাইয়ের নড়বড়ে অবস্থা নতুন কিছু নয়। ফ্র্যাঞ্চাইজিটি আগেও একাধিক মৌসুমে নিজেদের প্রথম কয়েকটি ম্যাচে হেরেছে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া পরিস্থিতি থেকে অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে শিরোপা জয়ের কীর্তিও আছে তাদের। তবে এবার যেন ধৈর্য ধরতে পারছেন না মুম্বাইয়ের ভক্তরা। দলের এমন ভরাডুবির দায় পুরোটাই চাপাচ্ছেন অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়ার ওপর। মাঠে নামলে দুয়োধ্বনি শুনতে হচ্ছে এই পেস অলরাউন্ডারকে।

বলে রাখা ভালো, মুম্বাই ইন্ডিয়ানস সমর্থকরা এখন দুই ভাগে বিভক্ত। দলটিকে পাঁচবার শিরোপা জেতানো রোহিত শর্মাকে চলতি আসরের আগে আচমকা নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। নেতৃত্বের ভার তুলে দেয়া হয় পান্ডিয়ার কাঁধে। এর পর থেকেই বিভক্তির শুরু। যদিও নেতৃত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে পান্ডিয়ার কোনো হাত নেই, পুরোটাই ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত। তারপরও দর্শকরা তাকেই রোস্ট করছেন।

আইপিএলের প্রি-সিজন প্রেস কনফারেন্সেও নতুন অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। সেসময় হার্দিক পান্ডিয়া অধিনায়কত্ব পাওয়ায় তাকে প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকরা। ক্যাপ্টেন্সি নিয়ে করা সেই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে পান্ডিয়া কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর অন্য প্রশ্নে চলে যান। পরে মুম্বাইয়ের হেড কোচ মার্ক বাউচারকেও একই প্রশ্ন করা হয়। তিনিও প্রশ্ন শোনার পর কিছুক্ষণ চুপ থাকেন। তবে কোনো জবাব দেননি।

মুম্বাই নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে সোমবার (১ এপ্রিল) রাজস্থানের মুখোমুখি হয়েছিল মুম্বাই। ওই ম্যাচটিই ছিল চলতি আসরে মুম্বাইয়ের প্রথম হোম ভেন্যুতে খেলা ম্যাচ। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে পান্ডিয়া যখন টস করতে নামেন তখন মুম্বাইয়ের সমর্থকরা তাকে আবারও দুয়ো দেন। পাশাপাশি ‘রোহিত, রোহিত’ বলে স্লোগানও দেন। দর্শকদের চক্ষুশূল হওয়া পান্ডিয়া এই আসরে ব্যক্তিগতভাবে খুব একটা ভালো পারফর্মও করতে পারেননি। সবমিলিয়ে খুবই বাজে সময় যাচ্ছে তার।

দর্শকদের এমন দুয়োর মাঝে ঘি ঢালেন সাবেক ভারতীয় তারকা ইরফান পাঠান। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘এক্সে’ (সাবেক টুইটার) বেশ কয়েকটি পোস্ট করে অধিনায়ক পান্ডিয়ার সমালোচনা করেন। এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আপনি সব সময় চাইবেন কঠিন কাজটা দলের নেতাই করবেন। যদি তিনি সেটা না করেন, তাহলে দলের সম্মান আদায় করতে পারবেন না।’

তবে এতকিছুর মাঝেও পান্ডিয়াকে সমর্থন জোগাচ্ছেন আপিএলের তার সাবেক সতীর্থরা। জাতীয় দলের সতীর্থ রবীচন্দ্রন অশ্বিন তো পান্ডিয়াকে অধিনায়ক হিসেবে না মানার কোনো কারণই দেখেন না। তিনি শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, অনীল কুম্বলে, কোহলি, ধোনিদের প্রসঙ্গ টেনে দিয়েছেন দারুণ এক যুক্তিও।

নিজের ইউটিউব চ্যানেলে বিষয়টি নিয়ে অশ্বিন বলেন, মানুষের মনে রাখা উচিত এই খেলোয়াড়রা কোন দেশের প্রতিনিধিত্ব করে। এটা আমাদের দেশ। সমর্থকদের কখনোই এমন কুৎসিত পথ নেয়া উচিত নয়।

পান্ডিয়ার অধীনে রোহিত শর্মা দলে থাকাটা অস্বাভাবিক নয় এমন ইঙ্গিত দিয়ে অশ্বিন বলেন, সৌরভ গাঙ্গুলী, শচীন টেন্ডুলকারের অধীনে খেলেছেন, আবার শচীন তার অধীনে। এই দুজনই খেলেছেন রাহুল দ্রাবিড়ের অধীনে। আর এই তিনজন খেলেছেন অনিল কুম্বলের অধীনে এবং তারা সবাই আবার এমএস ধোনির অধীনে খেলেছেন। যখন তারা ধোনির অধীনে ছিলেন, তখন এই খেলোয়াড়রা ক্রিকেটের জায়ান্ট ছিলেন। ধোনিও আবার খেলেছেন ভিরাট কোহলির অধীনে।

এরপর অস্ট্রেলিয়া ও ইল্যান্ডের প্রসঙ্গ টেনে দর্শকদের উদ্দেশে অশ্বিন বলেন, আপনি কি দেখেছেন জো রুট এবং জ্যাক ক্রোলির সমর্থকদের মধ্যে মারামারি হয়েছে? নাকি জো রুট এবং জস বাটলারের সমর্থকদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে? কিংবা স্টিভেন স্মিথের অনুরাগীদের অস্ট্রেলিয়ায় প্যাট কামিন্সের ভক্তদের সাথে লড়াই করতে দেখেছেন? এগুলো পাগলামি।

অশ্বিনের সুরে পান্ডিয়ার পক্ষেই কথা বলেছেন আইপিএলের তার সাবেক সতীর্থ ও নিউজিল্যান্ডের পেসার ট্রেন্ট বোল্ট। তিনি বলেন, বিষয়টি (ধুয়ো) আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। পেশাদার ক্রীড়াবিদ হিসেবে আপনাকে কাজের উপর ফোকাস করতে হবে, তবে এটি বলা যতটা সহজ, করা ততটা সহজ নয়।

উল্লেখ্য, তিন ম্যাচে ব্যাট হাতে অধিনায়ক পান্ডিয়া করেছেন ৬৯ রান। তবে বোলিংয়ে বেশ খরুচে এই বোলার। দুই ম্যাচে ৭ ওভার বল করেছেন। গুজরাটের বিপক্ষে তিন ওভারে ৩০ রান দিয়েও উইকেটশূন্য থাকতে হয়েছে তাকে। হায়দরাবাদের বিপক্ষে ৪ ওভার বল করে একটি উইকেট শিকার করলেও খরচ করেছেন ৪৬ রান।

/এনকে


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply