আকাশপথে প্রাণ হারিয়েছেন আরও যেসব রাষ্ট্রপ্রধান

|

মেহেদী হাসান রোমান

আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী এলাকা জোলফায় রোববার (১৯ মে) দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার। শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। প্রেসিডেন্ট রইসির সাথে প্রাণ হারান দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদোল্লাহিয়ান ও পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নর মালেক রহমাতিও।

তবে রইসির আগেও বিশ্বে অনেক রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা নিহত হয়েছেন আকাশপথের দুর্ঘটনায়। কেউ বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিছেন, আবার কেউ হেলিকপ্টারে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে প্রাণ হারান। দেখে নেয়া যাক, এমন কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধানের ঘটনা।

এক দশক পাকিস্তানের ক্ষমতায় ছিলেন জেনারেল জিয়া-উল-হক। ছিলেন দেশটির ষষ্ঠ প্রেসিডেন্ট। ১৭ আগস্ট ১৯৮৮ সালে বাহাওয়ালপুরে সুতলজ নদীর কাছে একটি বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান জিয়া। তার সাথে সেই বিমান দুর্ঘটনায় আরও প্রাণ হারান তার ঘনিষ্ঠ সহকারী আখতার আবদুর রহমান ও আমেরিকান কূটনীতিক আর্নল্ড লুইস রাফেলসহ আরও ২৭ জন।

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়া-উল-হক

৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৪০। প্যারাগুয়ের প্রেসিডেন্ট এস্টিগারিবিয়া এবং তার স্ত্রী অর্থাৎ ফার্স্ট লেডি জুলিয়া মিরান্ডা কুয়েটো একটি ডমেস্টিক ফ্লাইটে করে যাচ্ছিলেন নিজেদের হোমটাউন সান বার্নার্ডিনোতে। আল্টোস থেকে যাওয়ার সময় তাদের বহনকারী বিমানটি আগাপুই নামের একটি জায়গায় বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় প্রেসিডেন্ট এবং ফার্স্ট লেডি দুজনই নিহত হন।

প্যারাগুয়ের প্রেসিডেন্ট হোসে ফেলিক্স এস্টিগারিবিয়া

ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট র‍্যামন ম্যাগসেসের নামে দেয়া হয় ম্যাগসেসে পুরস্কার। যেটি এশিয়ার নোবেল হিসেবে পরিচিত। ১৯৫৭ সালে ক্ষমতায় থাকাকালীন ফিলিপাইনের সেবু শহরের উপকণ্ঠে যাবার পথে বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তিনি। এ ঘটনায় প্রাণ হারান র‍্যামন ম্যাগসেসে।

ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট র‍্যামন ম্যাগসেসে

১৬ জুন, ১৯৫৮ সালে দক্ষিণ ব্রাজিলের পারানা প্রদেশের কিউরিটিবা আফনসো পেনা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে একটি বিমান দুর্ঘটনা ঘটে। বিমানে ছিলেন সে সময় দেশটির ক্ষমতা থেকে সদ্যবিদায়ী রাষ্ট্রপতি নেরেউ রামোস। দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি।

নেরেউ রামোস

১৯৬৬ সালের ১৩ এপ্রিল একটি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হন ইরাকের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আব্দুল সালাম আরিফ। বসরা বিমানবন্দর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে ঘটনাটি ঘটে। ইরাকি এয়ার ফোর্সের হেলিকপ্টার ডি হ্যাভিল্যান্ড ডিএইচ ১০৪ ডভ-এর দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি।

ইরাকের প্রেসিডেন্ট আব্দুল সালাম আরিফ

প্রায় ৩০ বছর এবং আট দফায় লেবাননের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন রশিদ কারামী। ১৯৮৭ সালের ১ জুন কারামী লিবিয়ার ত্রিপোলি থেকে নিজ দেশের রাজধানী বৈরুতে যাওয়ার পথে একটি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। পরে জানা গিয়েছিল, তাকে বহনকারী হেলিকপ্টারে রাখা ছিল একটি বোমা। যার ওজন ছিল প্রায় ৩০০ গ্রাম। তবে অবাক করা বিষয় হলো, বোমাটি বিস্ফোরণ হবার পর হেলিকপ্টারে থাকা একমাত্র কারামীই নিহত হন।

লেবাননের প্রধানমন্ত্রী -রশিদ কারামী

এছাড়া চলতি শতাব্দিতে আকাশপথে প্রাণ হারিয়েছে একাধিক রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান। ২০০৪ সালে উত্তর মেসিডোনিয়ার প্রেসিডেন্ট বরিস ট্রাজকভস্কি, ২০০৬ সালে নাইজেরিয়ার শায়ত্বশাসিত অঞ্চল সোকোটো রাজ্যের সুলতান মুহাম্মদ ম্যাকিডো, ২০১০ সালে বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট লেচ কাকজিনস্কসহ আরও অনেকে।

এছাড়া ক্ষমতায় থাকাকালীন আকাশপথের দুর্ঘটনায় আরও নিহত হন একাধিক রাষ্ট্রপ্রধান। তারা হলেন, বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট রেনে ব্যারিয়েন্টোস, ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট জেইমে রোল্ডোস আগুইলেরা, মোজাম্বিকের প্রেসিডেন্ট সামোরা মাচেল, রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট জুভেনাল হাব্যারিমানা ও বুরুন্ডির প্রেসিডেন্ট সাইপ্রিয়েন এনতারিয়ামিরা।

প্রসঙ্গত, রইসির মৃত্যুর আগে সবশেষ এরকম ঘটনা দেখা যায় চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান পিনেরার বেলায়। লস রিওসের দক্ষিণ চিলি অঞ্চলে অবস্থিত লাগো র‍্যাঙ্কোর কমিউনে ছুটি কাটাতে যাওয়ার সময় একটি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান।

/এমএইচআর


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply