কেন এত সকালে সালমান-আনিসদের নেয়া হলো আদালতে?

|

৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে শেখ হাসিনা চলে যাবার পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সামনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। একের পর এক মামলা হতে থাকে নেতাকর্মীদের নামে। এরইমধ্যে হেভিওয়েট কয়েকজন নেতা বন্দি কারাগারে। রিমান্ডেও নেয়া হয়েছে একাধিকবার।

সাধারণত গ্রেফতার নেতাদের আদালতে নেয়া হতো দুপুরের পর, বিকেলে বা সন্ধ্যায়। কিন্তু বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক এমপি সাদেক খান আর চাকরিচ্যুত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানকে আদালতে নেয়া হয় ভোরে। সাতটার মধ্যে হাজির করে রিমান্ড শুনানিও করে ফেলা হয়।

সাধারণত এত সকালে কোর্ট বসতে দেখা যায় না। তাই অনেকেরই প্রশ্ন, আদালতের নির্ধারিত সময়সূচির বাইরে গিয়ে কেন এমন সময়ে তাদের নেয়া হলো আদালতে? এর উত্তর খুঁজতে একটু পেছনে যাওয়া যাক।

আনিসুল হক আর সালমান এফ রহমান আলোচিত হিসেবে প্রথম গ্রেফতার হন। এই দুজনকে যেদিন আদালতে হাজির করা হয়, সেদিনই প্রচণ্ড জনরোষের মুখে পড়েন তারা। জুতা ছোড়া হয়, মারা হয় ডিম। আশপাশ থেকে কিলঘুষি তো ছিলই।

ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের বেলাতেও জনতা দেখায় প্রচণ্ড ক্ষোভ।

এরপরও আওয়ামী লীগ ও তাদের সমমনা দলের প্রভাবশালী যে নেতাই গ্রেফতার হয়েছেন, আদালতে নেয়ার পথে ক্ষুব্ধ জনতার রোষানলে পড়েছেন। যেমন, সাবেক মন্ত্রী ডা. দীপু মনি মার খেয়েছেন। জনতা কিল-ঘুষি-লাথি মেরেছে হাসানুল হক ইনুকে। এছাড়া রমেশ চন্দ্র সেন, আরিফ খান জয়, আহমদ হোসেন, ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম, আবদুর রহমান বদি, আবদুস সোবহান গোলাপ, রাশেদ খান মেনন আর আ স ম ফিরোজও আদালত চত্ত্বরে দেখেছেন জনতার ক্ষিপ্র চেহারা।

আর সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের ওপর তো সিলেটে রীতিমত বড় পরিসরেই হামলা হয়। আহত হয়ে তাকে হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়।

বিশ্লেষণ করে দেখা হয়, আসামিদের নেয়ার পথে হামলার সব ঘটনায় দিনের বেলায়। বিশেষ করে দুপুরের পর বা বিকেলে। তখন আদালত চত্ত্বরে সাধারণ মানুষের ভিড় থাকে। থাকেন বিভিন্ন মতাদর্শের আইনজীবীরা। মূলত বিক্ষুদ্ধরা মিলে তাদের ওপর জুতা বা ডিম মারার ঘটনা ঘটাচ্ছেন; কিল-ঘুষি মারছেন।

বিভিন্ন সূত্রের খবর, যেহেতু সাধারণ বিক্ষুব্ধদের এসব থেকে থামানো যাচ্ছে না, পুলিশও তাদের নিবৃত্ত করতে পারছে না, তাই বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান, সাদেক খান আর জিয়াউল আহসানকে খুব ভোরে আদালতে নেয়া হয়। সকাল সাতটার মধ্যে তাদের আদালতে তুলে রিমান্ড শুনানি করে তা মঞ্জুরও করা হয়। মূলত ক্ষুব্ধ জনতা জড়ো হওয়ার আগেই আলোচিত আসামিদের আদালতের কার্যক্রম শেষ করার লক্ষ্যেই করা হয়েছে এমনটা।

এরআগে বুধবার (২৮ আগস্ট) আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলও কথা বলেন আদালতে নেয়ার পথে আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর হামলা ইস্যুতে। তিনি বলেন, এমন ঘটনা সমর্থনযোগ্য না। কিন্তু দীর্ঘদিন বঞ্চনার শিকার লোকজনকে থামানোও কঠিন হয়ে পড়ছে। পুলিশও আগের অবস্থায় নেই যে শক্তি প্রয়োগ করে এসব রুখবে। তবে, আইন উপদেষ্টার কথায় ছিল এমন ঘটনা থামানোর ইঙ্গিত।

/এমএমএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply