বাংলাদেশে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং এ কে এম শহীদুল হকের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এছাড়া, ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহিল কাফীকেও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে।
আজ বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল পৌনে সাতটায় তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর ৭টা ২০ মিনিটে তাদের আদালতে তোলা হয়। রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে সিএমএম আদালত সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুনকে আট দিন এবং শহীদুল হককে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠায়। এছাড়া, পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহিল কাফীর আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
আজ এজলাসে ওঠানোর পর আদালতের কাছে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন সাবেক আইজিপি শহীদুল হক। তিনি বলেন, আমি পুলিশ প্রধান থাকতে কোনো মিথ্যা মামলা দিয়ে কাউকে হয়রানি করিনি। পুলিশকে জনগণের কাছে নিয়ে গিয়েছি। যতদিন চাকরি করেছি, মানুষের সেবা করেছি। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তার কোনোটাই সত্য নয়। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ।
অপরদিকে, রিমান্ড শুনানির সময় আদালতে কোনো কথা বলেননি সদ্য সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি আদালতের এজলাস কক্ষের কাঠগড়ায় ঠাঁই দাড়িয়ে আইনজীবীদের বক্তব্য শুনতে থাকেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার মিছিলে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় তাকে।
এদিন প্রথমে শহীদুল হকের রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানির এক পর্যায়ে তার আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন আদালতকে বলেন, তিনি ২০১৮ সালে পুলিশের চাকরি থেকে অবসরে যান। এরপর সরকারি আর কোনো লাভজনক পদে থাকেননি। তিনি বাংলাদেশ পুলিশের অভাবনীয় উন্নয়ন সাধন করেন এবং জনগণের ভরসার জায়গায় নিয়ে গেছেন। তাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তিনি একজন বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষ। এ সময় তিনি শহীদুল হকের রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
এরপর আদালত শহীদুল হকের বক্তব্য শুনে তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর হাজারীবাগ থানার একটি অপহরণ মামলায় গ্রেফতার ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সুপার নিউমারারি পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আব্দুল্লাহিল কাফীর রিমান্ড শুনানি শুরু হয়।
এসময় আসামি পক্ষের আইনজীবী আদালতকে বলেন, তাকে মিথ্যা অভিযোগে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তারও রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়।
শুনানি শেষে আদালত তার আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। কাফী আদালতে কোন কথা বলেননি। সবশেষে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার মিছিলে নির্বিচার গুলিবর্ষণে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মুদি দোকানি আবু সায়েদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আবদুল্লাহ আল মামুনের রিমান্ড শুনানি শুরু হয়।
আসামি পক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, আসামি মামুন চাকরিরত অবস্থায় পদাধিকার বলে সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী পুলিশকে কমান্ড করেছেন। তার ব্যাক্তিগত কোনো পদক্ষেপ পুলিশের কাছে ন্যাস্ত হয়নি। তাকে যদি মামলা দিতেই হয় সেক্ষেত্রে এসব হত্যা মামলা দেয়া অনুচিত। তিনি চাকরি জীবনে কোন অনিয়ম করে থাকলে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হতে পারে। আন্দোলন চলাকালে গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা এসব মামলায় তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ নেই। তাকে হয়রানি করতেই এই মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তার পরিবার একটি উচ্চশিক্ষিত পরিবার। তারা সমাজসেবামূলক অনেক কাজ করেছেন, তাদের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। তিনি হার্টের রোগী, চোখে কম দেখেন এবং ডায়াবেটিসের রোগী।
এসব বিবেচনায় তার পক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে শুনানি করেন। আদালত শুনানি শেষে এ মামলায় তার আট দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড আদেশ শেষে সকাল ৭ টা ৫০ মিনিটে ডিবির একটি গাড়িতে সাবকে দুই আইজিপিকে সিএমএম আদালত থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। অপর পুলিশ কর্মকর্তা কাফিকে প্রিজনভ্যানে আদালত থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।
তবে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত গ্রেফতার আসামিদের মধ্যে দীপু মনির পর এই তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে হাতকড়া পরানো হয়নি।
/এমএইচ
Leave a reply