‘উৎসব শুরু’ প্রসঙ্গে মমতাকে ধুয়ে দিলেন চন্দ্রিল

|

‘আমি মেরেছি। ক্যাচ উঠেছে। বলটা উপর থেকে পড়ছে। ফিল্ডার দাঁড়িয়ে আছে, মোক্ষম সময়ে ক্যাচটি ধরবে বলে। বলটা শূন্যে। এসময় ‘উৎসব শুরু’ হয়ে গেলো। তাহলে ফিল্ডার ক্যাচ ধরলেও আমি কিন্তু আউট হব না। এ তো ভারী মজার ব্যাপার, তাই না?’

বিদ্রুপ মাখানো ভঙ্গিতে কথাগুলো বলছিলেন কলকাতার জনপ্রিয় প্রাবন্ধিক, বিতার্কিক ও লেখক চন্দ্রিল ভট্টাচার্য। আজ মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নিজের ভেরিভায়েড ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট করা এক ভিডিওতে এসব কথা বলেন তিনি।

সম্প্রতি, পশ্চিমবঙ্গের আরজি কর কাণ্ডের পর প্রায় এক মাস ধরে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ। যখন সচেতন নাগরিক ন্যায়বিচারের দাবিতে দিনের পর দিন আন্দোলন করছেন; যখন কলকাতা, মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামে মোমের আলোয় ‘রাত দখল’ করা হচ্ছে, তখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আন্দোলনকারীদের দুর্গাপুজোর উৎসবে ফিরতে অনুরোধ করলেন।

সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) নবান্নের প্রশাসনিক বৈঠকে রাত দখলের কথা সরাসরি উল্লেখ না করলেও মমতা বলেন, ‘প্রতিদিন রাতে আপনারা রাস্তায় থাকছেন। অনেক মানুষের তো অসুবিধা হয়। অনেক বয়স্ক মানুষ আছেন মাইকের আওয়াজে তাদের অসুবিধা হয়, ঘুম হয় না। এক মাস তো হয়ে গেল, এক মাস ১ দিন। আমি অনুরোধ করব, পুজোতে ফিরে আসুন, উৎসবে ফিরে আসুন।’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সকল রাজ্যবাসীকে আহ্বান জানান উৎসবে সামিল হওয়ার। ঠিক কোন মানসিকতা থেকে তিনি এই আবহে এমন উৎসবের আহ্বান জানাতে পারেন, তা নিয়ে প্রতিবাদে মুখ খুলতে শুরু করেছেন তারকারা। মুখ খুললেন চন্দ্রিলও।

যদিও আরজি কর ইস্যুতে গত কয়েক দিন ধরে চুপ ছিলেন চন্দ্রিল। এবার তিনি যেন মুখ খুললেন না বরং শাসকদলের শিরোমনিকে রীতিমতো ধুয়ে দিলেন।

মমতার ‘উৎসব শুরু, উৎসবে ফিরুন’ মন্তব্যের পালটা জবাব দিয়ে ‘চন্দ্রবিন্দু’ ব্যান্ডের এই সদস্য বলেন, ‘এতোদিন উৎসবের সংজ্ঞা ও উপযোগিতা সম্পর্কে আমরা একরকম জানতাম। কিন্তু একজন প্রধান সমাজতত্ত্ববিদ(?) এখন উৎসবের এক নতুন উপযোগিতা সম্পর্কে আমাদের কাছে একটি তত্ত্ব সরবরাহ করেছেন। তার মতে, উৎসব যদি শুরু হয়ে যায়, তাহলে কিন্তু প্রতিবাদ-প্রতিরোধ-বিদ্রোহ থেমে থাকতে হবে! ঠিক যেমন রেফারি খেলা শেষের বাঁশি বাজালে তুমি আর খেলা চালাতে পার না; তেমনিভাবে তোমার মনের মধ্যে যতখানি ক্ষোভ সঞ্চিত হোক না কেন, উৎসব এলে সেটাকে তুমি আর উগরে দিতে পারবে না। উৎসব যে একটা সুমহান আব্বুলিশ, যেটা বলে দিলে তুমি আর চোর ধরতে পারবে না।’ 

চন্দ্রিল যেন এমন বক্রোক্তির মাধ্যমে ক্ষুদে নাপাম বোমা ফাটালেন। তার স্বভাবসুলভ স্যাটায়ার চলতে থাকে ভিডিওচিত্রে– ‘কী ঘটেছে? একটা প্রখর অন্যায় ঘটেছে। অনেকজনের মনে হয়েছে, যে অন্যায়ের প্রতিকার করার কথা ছিল যাদের, তারা সেই অন্যায়ের প্রমাণ লোপাটে সাহায্য করেছে’। যে সেমিনার রুম থেকে আর জি কর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল, তার পাশেই একটি ঘর ভাঙার বিষয়টিকেই ইন্ডিকেট করলেন চন্দ্রিল।

ভিডিওচিত্রে এই রম্যলেখক আরও বলেন, ‘সেই অন্যায়ের এক প্রধান হোতাকে আরও উঁচু কর্তৃপক্ষ থেকে তিরস্কারের বদলে পুরস্কৃত করা হয়েছে’। সোজাসুজি সন্দীপ ঘোষকে কটাক্ষ চন্দ্রিলের। এরপর তিনি যোগ করেন, ‘একটু বুদ্ধি থাকলেই বোঝা যায়, এই অন্যায়টাকে কেন্দ্র করে জনরোষ আছড়ে পড়লেও, আসলে শাসকদলের বা সরকারের অনেকদিনের অনেকগুলো অন্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছিল। এটাকে কেন্দ্র করেই সেটা বিস্ফোরণে রূপলাভ করেছে।’

মমতাকে খোঁচার কাঁটায় বিঁধিয়ে চন্দ্রিল বলেন, ‘শাসকদলের প্রধান একজন মানুষ আশ্চর্য উৎসবের তত্ত্বটা এনে হাজির করেছেন। বাবা, যাই হয়েছে, এবার উৎসবে ফিরে এসো, পুজোয় ফিরে আসো। বিপথে যাচ্ছিলেন, এবার ফিরে এসো। …অনেক প্রশয় দিয়েছি, অনেক ছাড় দিয়েছি। আন্দোলন আন্দোলন খেলা হয়ে গেছে, বিদ্রোহ বিদ্রোহ খেলা শেষ, এবার আনন্দের স্কুলে এসে ভর্তি হয়ে যাও।’

রবী ঠাকুরের অন্যায় নিয়ে করা বিখ্যাত এক বাণীতে সবশেষ এক টুইস্ট নিয়ে হাজির হলেন চন্দ্রিল। মনে রাখতে বললেন, ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সয়ে, উৎসব তাদের ঘিরে নদীসম বয়ে..। অন্যায় প্লাস্টিকে মুড়ে উৎসবের স্রোতে, ফেলে দাও ভেসে যাবে নানান হুজ্জোতে..। কী স্লোগানে ফেঁপে উঠে রাজ্যের ভাবমূর্তি? অশেষ অন্যায় হোক, সঙ্গে হোক ফূর্তি’।

/এএম




সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply