খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় গত বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) মোটরসাইকেল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে মামুন নামে একজন গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়। পরদিন এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এ সময় ঘরবাড়ি-দোকানপাটে ভাঙচুর ও আগুন দেয়া হয়।
এরই জেরে পরবর্তীতে জেলার বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এতে তিনজন নিহত হন। তাছাড়া, রাঙ্গামাটিতেও এ ঘটনার জেরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
পার্বত্যঅঞ্চলের এই চলমান পরিস্থিতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নানা তথ্য ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। বাংলাদেশের ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার ছড়িয়ে পড়া এসব তথ্যের অনেকগুলোকে গুজব হিসেবে শনাক্ত করেছে।
রিউমর স্ক্যানার জানায়, খাগড়াছড়িতে সাম্প্রতিক সংঘর্ষে জেনার চাকমা নামের একজন ব্যাক্তি মারা গেছেন বলে ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে। পোস্টগুলোতে জেনার নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পুরোনো একটি পোস্টের স্ক্রিনশট যোগ করা হয়। ওই পোস্টে লেখা ছিল, ‘আগস্ট মাস এখন শোকের মাস নয় বিজয়ের মাস!’
তবে রিউমর স্ক্যানারকে জেনার চাকমা জানিয়েছেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব। তিনি সুস্থ রয়েছেন।
এক্ষেত্রে নামের বানানে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল। মূলত খাগড়াছড়িতে মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম জুনান চাকমা (২০)। এই নামটিকে ‘জেনার’ ভেবে নিয়ে জীবিত ব্যক্তির নিহত হওয়ার দাবি করে পোস্ট করেন অনেকে।
অপরদিকে, গতকাল শুক্রবার বেশ কিছু ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে সেনাবাহিনীর কিছু সদস্যের সাথে অস্ত্র হাতে পাঞ্জাবি পরা এক ব্যক্তির ছবি পোস্ট করতে দেখা যায়। সেখানে ছবিটি সম্প্রতি পাবর্ত্য এলাকার ঘটনার বলে দাবি করা হয়।
তবে রিউমর স্ক্যানার জানায়, গত ১৬ আগস্ট রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হলে সেনাবাহিনীর একটি দল সেখানে যায়। ভাইরাল ছবিটি মূলত সেই সময়ের। তবে অস্ত্র হাতে পাঞ্জাবি পরা ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
রংপুর কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক বলেন, ওই ব্যক্তির নাম মো. মিজানুর রহমান। তিনি রংপুর কারাগারে কারারক্ষী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
আবার কিছু ফেসবুক পোস্টে খাগড়াছড়ির দিঘীনালা হ্যাশট্যাগ রেখে জঙ্গল সদৃশ এলাকায় কয়েকজন জড়ো হয়ে বসে রয়েছেন এমন একটি ছবি পোস্ট করা হয়। তাতে দাবি করা হয়, ‘অনেকের ঘরবাড়ি পোড়ানো ও কয়েকজনকে হত্যা করা হয়েছে। না জানি আজ রাতে আরও কতজনের ঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়, কত জনকে হত্যা করা হয়। সেজন্য এরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে।’
তবে ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বলে জানিয়েছে রিউমর স্ক্যানার। ছবিটি চলতি বছরের অন্তত মে মাস থেকে ইন্টারনেটে রয়েছে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি। এক্সে গত ১৯ মে এই ছবিসহ একটি পোস্ট ও ২০ মে ভারতীয় গণমাধ্যম ‘দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনেও একই ছবি পাওয়া যায়। দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বেশকিছু শরণার্থী ভারতের মিজোরামের লংৎলাই জেলায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
এছাড়া, ধর্মীয় স্থাপনা নিয়ে ভুল তথ্য সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। এক্সে ভারতে নির্বাসিত বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিন খাগড়াছড়ি এবং ফেসবুকে রাঙ্গামাটির দৃশ্য দাবি করে পোড়া মূর্তির ছবি পোস্ট করেছে। সেখানে এটিকে পাহাড়ে সংকটের সাম্প্রতিক ছবি বলে দাবি করেন তিনি। তবে ভাইরাল সেই ছবিটি অন্তত চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ইন্টারনেটে রয়েছে বলে জানায় রিউমর স্ক্যানার।
তাছাড়া, ‘অস্ত্রহাতে রয়েছেন এবং হাটাহাটি করছেন এমন একাধিক ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করে সাম্প্রতিক সময়ের বলে দাবি করা হয়। তবে রিউমার স্ক্যানার জানায় ছড়িয়ে পড়া সেই ভিডিওগুলো বাংলাদেশের নয়।
রাঙামাটিতে মার্কিন সেনারা ঢুকে পড়ছে এমন দাবিতেও একটি ভিডিও প্রচার হতে দেখা গেছে। সেই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বলে জানিয়েছে রিউমর স্ক্যানার।
আগুনে ঘড়বাড়ি পুড়ছে এমন একটি ছবিকে রাঙ্গামাটির বর্তমান অবস্থা দাবি করে একাধিক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট দেয়া হয়েছে। সেই ছবিটি পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের বলে জানায় রিউমর স্ক্যানার।
/আরএইচ
Leave a reply