রইসুল ইসলাম ইমন, বাউফল করেসপনডেন্ট:
অন্যান্য আট-দশটি সাধারণ বিদ্যালয়ের মতই একটি পটুয়াখালী বাউফলের আব্দুর রশিদ সরদার মাধ্যমিক বিদ্যালয়। তফাৎ শুধু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও স্কুল কমিটির সভাপতি। আইনকানুননের তোয়াক্কা করেন না এই দুই ব্যক্তি। মাউশি কিংবা আদালত কোনো সিদ্ধান্তই মানেন না তারা৷
এসব অনিয়মের বিষয় দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে ২৮ সেপ্টেম্বর ‘বাউফলে প্রধান শিক্ষকের দাপট’ শিরোনামে সংবাদ প্রচার করে যমুনা টেলিভিশন। সংবাদের দুইদিন পরে ১ অক্টোবর প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের জন্য সভাপতিকে দ্বিতীয় দফায় নির্দেশ দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। তবে অভিযোগ, এবারেও উপেক্ষা হয়েছে মাউশির চিঠি।
যমুনা টেলিভিশনের অনুসন্ধানী সংবাদ বলছে, ঘটনার সূত্রপাত ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর। হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করে তৎকালীন সভাপতি মনোয়ারা বেগম ও নিয়োগ কমিটি। ২৭ প্রার্থী কেন্দ্রে উপস্থিত হলে, তাদের পরীক্ষা স্থগিতের কথা জানানো হয়। তবে অভিযোগ ওঠে, সেদিনই গোপনে ওই প্রার্থীদের মধ্যে ৫ জনের পরীক্ষা নেয়া হয়। সন্ধ্যার মধ্যেই প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া হয় খাইরুল আলমকে। এই ঘটনার প্রতিবাদে মাউশি মহাপরিচালক বরাবর আবেদন জানায় আট প্রার্থী। সরেজমিন দুই দফা তদন্ত করে মহাপরিচালক বরাবর প্রতিবেদন পাঠায় বরিশাল অঞ্চলের উপ-পরিচালক। তদন্ত প্রতিবেদনে স্পষ্ট হয় অনিয়মের বিষয়টি।
প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর ২৬ ডিসেম্বর খাইরুলের নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দেয় মাউশি। কিন্তু মাউশির চিঠি উপেক্ষা করেন বিদ্যালয়ের তৎকালীন সভাপতি দেলোয়ার হোসেন। উল্টো মাউশির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে রিট করেন অভিযুক্ত খাইরুল। রিটের শুনানি শেষে গত ১৫ জানুয়ারি মাউশির নির্দেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। সেই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন মাউশি মহাপরিচালক।
এরপর ২০ মার্চ, হাইকোর্টের আদেশ আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে চেম্বার আদালত। চেম্বার আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী আপিল নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত পুরোপুরি কার্যকর রয়েছে মাউশির নিয়োগ বাতিলের চিঠি। অথচ বহাল তবিয়তেই আছেন খাইরুল আলম। এমনকি শিক্ষকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগও আছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
সংবাদ প্রচারের পরে গত ১ অক্টোবর খাইরুল আলমের নিয়োগ বাতিল করে মাউশিকে জানানোর জন্য সভাপতিকে ফের চিঠি পাঠানো হয়। চেম্বার আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী মাউশির নির্দেশ পুরোপুরি কার্যকর থাকার বিষয়টি নতুন চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। পরে এইদিন (১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ম্যানেজিং কমিটির মিটিং অনুষ্ঠিত হয়৷ মিটিংয়ে চিঠির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এতে করে দ্বিতীয় দফায় মাউশির চিঠি উপেক্ষা করা হয়েছে। উপেক্ষা করা হচ্ছে চেম্বার আদালতের সিদ্ধান্ত। মাউশি ও আদালত সবাইকে অগ্রাহ্য করে বহালতবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন ওই প্রধান শিক্ষক।
এর আগে, ৩ সেপ্টেম্বর সভাপতির কাছে মাউশির নির্দেশ বাস্তবায়ন করার দাবিতে আবেদন করেছিল একজন ভুক্তভোগী নিয়োগ প্রার্থী। তখনও বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন ইউএনও৷
ভুক্তভোগী নিয়োগ প্রার্থীদের অভিযোগ, বিগত দিনের মতই ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে মাউশি ও চেম্বার আদালতের সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করে খাইরুল আলম এখনও দায়িত্ব পালন করছেন। সভাপতি টেকনিকালি খাইরুলকে নতুনভাবে ফন্দি আঁটতে সুযোগ করে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন মাউশিতে অভিযোগ দেয়া ৩ নিয়োগ প্রার্থী।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেন বিদ্যালয়ের সভাপতি ও ইউএনও মো. বশির গাজী বলেন, আপনি শুধু প্রশ্ন করেন! আর তো কেউ বলে না। তিনি আরও বলেন, চিঠির বিষয়ে ডিসির মতামত চাওয়া হয়েছে। তিনি জিপির (রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী) পরামর্শ নিতে বলেছেন৷ তার পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে মুঠোফোনে দ্বিতীয় দফায় নিয়োগ বাতিলের জন্য চিঠি পাঠানোর সত্যতা নিশ্চিত করে মাউশির সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক উইং) কাওছার আহমেদ বলেন, নিয়োগ বাতিল করার দায়িত্ব সভাপতির। আমরা তাকে নির্দেশসহ অনুরোধ জানিয়ে পত্র পাঠিয়েছি। সভাপতি দুইবার চিঠি উপেক্ষা করার কারণ কী জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
/এটিএম
Leave a reply