অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের মধ্যে বিবাদের একটি অপতথ্য বুধবার ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যেখানে দাবি করা হয়, উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন খবর নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে যমুনা টেলিভিশন। পাশাপাশি সহায়তা নেয়া হয় ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানারের। অনুসন্ধানে বিষয়টি গুজব বলে প্রমাণিত হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই একটি নামহীন ব্লগস্পট লিংকের সন্ধান মেলে। যেখানে দাবি করা হয়, উপদেষ্টা ও সেনাবাহিনীর মধ্যে বিশাল বিতর্ক হয়েছে। সেই ব্লগস্পটের কনট্যাক্ট বা অ্যাবাউট আস-এও কোনো তথ্য দেয়া নেই। এখানকার পোস্টটি অনেকের ফেসবুক পোস্টের কমেন্টবক্সে বুধবার বিকেল থেকে লক্ষ্য করা গেছে।
পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইয়াসমিন সুলতানা পলেন নামে একজনের পোস্ট ভাইরাল হতে দেখা যায়। যেখানে তিনি লেখেন, ড. ইউনূসকে ওয়াকার-উজ-জামান সাত দিন সময় বেঁধে দিয়েছে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে। পক্ষান্তরে ড. ইউনূস ওয়াকার-উজ-জামানকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেধে দিয়েছে পদত্যাগ করতে। তিনি লেখেন, সার্ভিস আলম (বোঝাতে চেয়েছেন সার্জিসের কথা) সেনাপ্রধানের সঙ্গে বেয়াদবি করায় তাকে ধমকে বসিয়ে দিয়েছে আর্মি অফিসারদের কেউ একজন।
ইয়াসমিন সুলতানা পলেনের ফেসবুক আইডি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তিনি শেখ হাসিনার একজন অনুরাগী এবং আওয়ামী লীগের সমর্থক। নিজের ফেসবুকেও তিনি ব্রিটেনের যুব মহিলা লীগের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজেকে দাবি করেছেন।
৭ অক্টোবরও পলেন একটি ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করেছেন, যেখানে তিনি বর্তমান বাংলাদেশকে পুরো বাংলাদেশকে আয়নাঘরের সাথে তুলনা করেছেন। এছাড়া নানা সময়ে তিনি বর্তমান সরকার নিয়ে বিতর্কিত নানা পোস্ট এবং দু-একজন উপদেষ্টার ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
বুধবার মূলত সবচেয়ে বেশি যে ভিডিওটি ছড়ায়, তা মুফাসসিল ইসলাম নামের একটি ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি থেকে। তিনি ভিডিওতে বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টাকে ঘিরে রেখেছেন সেনাপ্রধান ও অন্য সেনা কর্মকর্তারা। এমন ভিডিও পোস্ট করার সঙ্গে সঙ্গেই অনেকে তা শেয়ার করেন।
কানাডা প্রবাসী মুফাসসিলের ফেসবুক পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে তার প্রায় সব পোস্টই ড. ইউনূস এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে। প্রায় প্রতি ভিডিওতেই সমালোচনা করেছেন বর্তমান সরকারের। তার অনুসারী অনেকেই আওয়ামী সমর্থক। পোস্টে ‘স্টেপ ডাউন ইউনূস’ লিখতেও দেখা গেছে অনেককে।
এছাড়া দু-একটি ইউটিউব চ্যানেলেও এনিয়ে ভিডিও পোস্ট করতে দেখা যায়। Dhormoi Odhormo (ধর্মই অধর্ম) নামে একটি পেজ থেকে দাবি করা হয়, যমুনায় সেনাপ্রধান ও উপদেষ্টাদের মধ্যে মারামারি হয়েছে। এছাড়া আরও গুজব সম্বলিত নানা মুখরোচক কথা বলা হয় সেই ভিডিওতে।
পুরো বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার কথা বলে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলমের সাথে। তিনি জানান, মঙ্গলবার বিকেলের পর থেকে তিনি তার পরিবারের সাথে রয়েছেন। একই সময়ে প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি অপূর্ব জাহাঙ্গীর এবং সেনাবাহিনীর একাধিক উর্ধ্বতন কর্মকতার সাথেও কথা বলে রিউমর স্ক্যানার৷ তারা বিষয়টিকে গুজব হিসেবে চিহ্নিত করেছেন৷
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গুজব ছড়ানো অধিকাংশই প্রবাসী। ফেসবুক কার্যকলাপেও প্রতীয়মান হয় তারা আওয়ামী লীগ সমর্থক এবং সবারই ব্যক্তিগত ফ্যানবেজ রয়েছে।
/এমএমএইচ
Leave a reply