বাংলাদেশ জাতীয় দলে দুই দফা কোচ ছিলেন চান্দিকা হাথুরুসিংহে। প্রথম দফায় ২০১৪ সালের জুন থেকে ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। তবে চুক্তির মাঝপথে চাকুরী থেকে অব্যাহতি দেন তিনি। তখন এ নিয়ে ব্যপক সমালোচনা হয়েছিল। মূলত শ্রীলঙ্কার কোচ হওয়ার জন্য সেই সময়ে বাংলাদেশের দায়িত্ব ছাড়েন। তবে খুব বেশি দিন স্থায়ী হতে পারেননি নিজ দেশে।
এরপর ২০২৩ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে আবার হাথুরুসিংহকে কোচের পদে ফিরিয়ে আনেন প্রেসিডেন্ট নাজমুল হোসেন পাপনের অধীনে থাকা তৎকালীন ক্রিকেট বোর্ড। তার সঙ্গে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত চুক্তি করা হয়ে। অর্থাৎ সেই মেয়াদ ছিল আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কিন্তু এর আগেই বরখাস্ত করা হলো এই কোচকে।
হাথুরুর অধীনে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স:
২০১৪ সালে প্রথম মেয়াদে বাংলাদেশে এসেছিলেন এই শ্রীলঙ্কান। পরের বছরের ওয়ানডে বিশ্বকাপে টাইগারদের পারফরম্যান্স বাধিয়ে রাখার মতো। সেবার হাথুরুর পছন্দেই জাতীয় দলে চমক হয়ে আসেন মোস্তাফিজুর রহমান। হাথুরুর সময়ে ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে স্মরণকালের সেরা পারফরম্যান্স করে বাংলাদেশ। এরপর টাইগারদের দায়িত্ব ছেড়ে চলে যান শ্রীলঙ্কায়। হাথুরুর অধীনেই ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিলো বাংলাদেশ।
সেই সময়কার পারফরম্যান্স বিবেচনায় সফল ছিলেন চান্দিকা হাতুরুসিংহে। তবে ড্রেসিংরুমে নানা বিশৃঙ্খলা খেলোয়াড়দের সাথে সম্পর্কের অবনতি নানা বিতর্কের জন্ম দেয়।
হাথুরুর দ্বিতীয় মেয়াদে কোচ হবার পর ২০২৩ সালে প্রথম প্রতিপক্ষ ছিলো ইংল্যান্ড। ঘরের মাঠে সেই সিরিজে পরাজিত হয় বাংলাদেশ। সিরিজ হারে সমালোচনার মুখে পড়ে বাংলাদেশ। তবে সমালোচনা শেষ হতে না হতেই টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ টাইগাররা। ইংলিশ বধের পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুই সিরিজ জিতে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
এরপর এশিয়া কাপ, নিউজিল্যান্ড সিরিজ ও বিশ্বকাপে ভরাডুবি হয় বাংলাদেশের। এরপরই কিউইদের সাথে ১-১ এ টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ ড্র করে টাইগাররা। এরপর শ্রীলঙ্কার সাথে ওডিআইতে সফলতা আসলেও টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে হারে টাইগাররা। জিম্বাবুয়ের সাথে ৪-১। যুক্তরাষ্ট্রে বিপক্ষে ২-১ এ সিরিজ হার বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচে মাত্র ৩ জয়। পাকিস্তানের সাথে ২-০ তে টেস্ট সিরিজ জিতলেও সর্বশেষ ভারতের মাটিতে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে ধবলধোলাই ।
কোচ হাথুরুসিংহের সাথে পুরনো দ্বন্দ আছে বিসিবির নতুন সভাপতির। ২০১৬ সালে দল নির্বাচনে হস্তক্ষেপের কারণে প্রধান নির্বাচকের পদ থেকে সরে গিয়েছিলেন ফারুক। হাথুরুসিংহের মেয়াদ ছিলো আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত। কিন্তু নতুন বিসিবি সভাপতি ফারক আহমেদ আগেই আভাস দিয়েছিলেন হাথুরুকে সরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে।
মূলত শ্রীলঙ্কান কোচের বিরুদ্ধে আছে অসদাচরণ ও আচরণবিধি ভাঙ্গার অভিযোগ। অভিযোগ আছে ক্রিকেটার নাসুমের সাথে শারীরিক লাঞ্চনার ঘটনা নিয়ে। অভিযোগ আছে প্রথম মেয়াদের মতো দ্বিতীয় মেয়াদেও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে ম্যানেজ করে চলতেন হাথুরু। যেকারণে ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভরাডুবি, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার এইটের ব্যর্থতার পর ও কোচের কোনো দায় দেখেনি বিসিবি। তাই বাংলাদেশ ক্রিকেটে ব্যর্থতার নেপথ্যের নায়ক হাথুরুসিংহে।
/আরআইএম
Leave a reply