মাহফুজ মিশু:
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর চীনে প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সফরে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকও করেন তিনি।
সেই বৈঠকে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় চীনের শক্ত অবস্থানের প্রত্যাশা করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এক চীন নীতির প্রতি ঢাকার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে তিস্তা বহুমুখী প্রকল্পে বেইজিংয়ের আগ্রহকে স্বাগত জানান তিনি। অপরদিকে, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ঢাকার পাশে থাকার কথা বলেন চীনা প্রেসিডেন্ট।
এই সফরে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি ও আটটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এছাড়া ২১০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ-ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশটি।
এসব বিষয় বিশ্লেষণ করে সফরটিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন ও যুক্তরাষ্ট্র্রে পটপরিবর্তনের বাস্তবতায় এই সফর তাৎপর্যপূর্ণ।
সেন্টার ফর ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যাফেয়ার্সের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি যে আগের চেয়ে অনেক স্বাধীন, সফরে আন্তর্জাতিক মহল এই বার্তাটি পেয়েছে। কম্পিটিং প্রেসারগুলো আমাদের পররাষ্ট্রনীতির জায়গা না। এটি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির ওপর কী প্রভাব ফেলে তা দেখার বিষয়। তৃতীয় পক্ষের জায়গা থেকে এই সফরটি না দেখা সমীচীন হবে বলে মনে করি।
চীনের সিচুুয়ান ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মারুফ হাসান বলেন, বিশ্বে যতই অস্থিরতা থাকুক চীন তার বৈদেশিক নীতির জায়গায় অটুট থাকবে। একটি দেশ সফল হওয়া বাকি দেশগুলোর ব্যর্থতা নয় বলেও দেশটির প্রেসিডেন্ট মন্তব্য করেছেন।
এদিকে, এই সফরে চীনা ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। সেই সব আলোচনায়ও ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক পরের ধাপে নেয়ার ব্যাপারে আলাপ করেন তারা। উন্নয়ন অংশীদারের পাশাপাশি রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদারেও ঢাকা ও বেইজিং অনেকটা একমত।
এ বিষয়ে সাহাব এনাম খান বলেন, ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যাতে আরও টালমাটাল না হয়, সেটি নিয়ে চীন অবশ্যই উদ্বিগ্ন থাকবে। সেই হিসেবে কৌশলগত অংশীদারিত্বের বিষয়টি আসা খুবই স্বাভাবিক। এছাড়া মিয়ানমার, বঙ্গোপসাগরসহ পুরো ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়ে উভয় দেশের মোটামুটি একই ধরনের কনসার্ন রয়েছে।
ড. মোহাম্মদ মারুফ হাসান বললেন, কোনো দেশের সাথে অর্থনৈতিক দৃঢ় সম্পর্ক করতে গেলে রাজনৈতিক বিষয়টি চলেই আসে। চীন কখনো কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপে নেপাল, ভুটান ও ভারতের সেভেন সিস্টার্সসহ আঞ্চলিক উন্নয়নে জোরালো অবস্থান তুলে ধরার মাধ্যমে ভূ-রাজনীতিতে ঢাকার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
/আরএইচ/এমএন
Leave a reply