খ্যাতিমান ইসলামী চিন্তাবিদ প্রফেসর তারিক রামাদানের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছেন ফ্রান্সের এক নারী। অভিযোগকারী হিন্দা আয়ারী একজন লেখক এবং ধর্মপরিচয়ে মুসলিম। উগ্রপন্থী ধর্মীয় মতবাদ সালাফিজম থেকে কট্টর সেকুলার এক্টিভিস্টে পরিণত হওয়া হিন্দা গত শুক্রবার তার ফেসবুক একাউন্টে তারিকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেন।
একই সাথে ফ্রান্সের এক আদালতে মামলাও করেছেন হিন্দা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে তারিক রামাদান বলেছেন, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলার কারণে আইনী পদক্ষেপ নেবেন তিনি।
এএফপির প্রতিবেদন মতে, ফ্রান্সের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর রুয়েনে দায়ের করা মামলায় হিন্দা দাবি করেছেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি তাকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করেছেন।
হিন্দার সংগঠন ‘লিবারেটরর্স এসোসিয়েশন’ এর ফেসবুক পেইজে গত শুক্রবার দাবি করা হয়, বহু বছর আগে তিনি (হিন্দা আয়ারী) খুবই মারাত্মক কিছুর ভুক্তভোগী হয়েছিলেন। কিন্তু নিরাপত্তার ভয়ে এতদিন অভিযুক্তের নাম প্রকাশ করেননি।
৪০ বছর বয়সী হিন্দা ২০১৬ সালে তার বই ‘আই চুজ টু বি ফ্রী’ প্রকাশ করেন। বইটির একটি অধ্যায়ে উল্লেখ করেন, বহু বছর আগে তিনি ‘জুবায়ের’ নামে এক ব্যক্তির দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন।
বইয়ের বর্ণনা অনুযায়ী, কোনো এক সময় প্যারিসের একটি হোটেলে ইসলামী এক অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার পর জুবায়ের হিন্দাকে রুমে ডাকেন। সেখানে ধর্ষণের চেষ্টায় বাধা দিলে তাকে চড় মারাসহ বিভিন্নভাবে অপমান করা হয়।
তবে শুক্রবারের পোস্টে হিন্দা বলেন, “আমি আজ নিশ্চিত করছি, সেই জুবায়ের হলেন তারিক রামাদান।”
অভিযোগকারীর আইনজীবী জোনাস হোদাদ এএফপি’কে বলেন, এত দিন ভয়ের কারণে ঘটনা প্রকাশ করেননি হিন্দা। গত কয়েকদিন ধরে মিডিয়ায় হলিউড মুগল হার্ভে ওয়েইস্টিনের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আলোচিত হওয়ার প্রেক্ষিতে নিজের ঘটনাটিও প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
তারিক রামাদান বর্তমানে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে অধ্যাপনা করছেন। সুইজারল্যান্ডে জন্ম নেয়া এই ইসলামী ব্যক্তিত্বকে বর্তমান সময়ের অন্যতম প্রভাবশালী চিন্তাবিদ মনে করা হয়। তারিক মিশর ভিত্তিক ইসলামী রাজনৈতিক সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠাতা হাসান আল বান্নার নাতি। ফ্রান্সে বেড়ে ওঠা তারিক ২০০২ সালে দেশটির তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোলাস সারকোজির সাথে বাদানুবাদে জড়িয়ে বেশ আলোচিত হন। ফ্রান্স সরকার তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে উগ্রবাদকে মদদ দেয়ার অভিযোগ তুলেছিল। তবে ব্রিটেনে তারিককে উগ্রবাদবিরোধী একজন ইসলামপন্থী মনে করা হয়। এ জন্য ২০০৫ সালে টনি ব্লেয়ার সরকারের সময় তাকে ব্রিটিশ সরকারের কাউন্টার টেরোরিজম সংক্রান্ত উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হয়।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মুখপাত্র দ্য টেলিগ্রাফকে বলেছেন, আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়েছি। তবে বিস্তারিত না জানতে পারায় এখনই কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।
/কিউএস
Leave a reply