রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার দুটি প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের অনেকে বলছেন, প্রশ্ন করার ধরণে সাম্প্রদায়িক মানসিকতা ফুটে উঠেছে।
গত বুধবার বিকালে অনুষ্ঠিত রাবির চারুকলা অনুষদের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ৮০টি প্রশ্ন ছিল। এর মধ্যে দুটি প্রশ্ন নিয়ে আপত্তি উঠে। প্রশ্নপত্রের ৪১ নম্বর ক্রমিকে ছিল- ‘মুসলমান রোহিঙ্গাদের ওপর মায়ানমারের সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধধর্মালম্বীরা সশস্ত্র হামলা চালায় কত তারিখে?’ উত্তর দেয়ার জন্য চারটি অপশন ছিল যথাক্রমে- (ক) ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ (খ) ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ (গ) ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ (ঘ) ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭।
৭৬ নম্বর ক্রমিকের প্রশ্নটি ছিল- ‘পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থের নাম কী?’ উত্তর দেয়ার জন্য চারটি অপশন ছিল যথাক্রমে- (ক) পবিত্র কোরআন শরীফ (খ) পবিত্র বাইবেল (গ) পবিত্র ইঞ্জিল (ঘ) গীতা।
প্রথম প্রশ্নটিতে রোহিঙ্গাদের ওপর হামলার জন্য একটি নির্দিষ্ট ধর্মের অনুসারীদের দায়ী করা হয়েছে, যাতে স্পষ্টত সাম্প্রদায়িক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। দ্বিতীয় প্রশ্নে সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হিসেবে চারটি ধর্মগ্রন্থের নাম অপশনে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি ধর্মের অনুসারীদের কাছে অন্য ধর্মের গ্রন্থের চেয়ে নিজের ধর্মের গ্রন্থ বেশি মূল্যবান বা শ্রেষ্ঠ মনে হওয়াই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ যে কোনো একটি অপশনকে সঠিক হিসেবে নম্বর প্রদান করলে অন্যান্য তিনটি ধর্মের যেসব অনুসারী পরীক্ষা দিয়েছেন (এবং নিজ ধর্মের গ্রন্থকে শ্রেষ্ঠ বলে লিখে এসেছেন) তারা নম্বর পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন।
প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণকে বেছে নেয়ায় সামাজিক মাধ্যমে অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন।
এর প্রেক্ষিতে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ধর্মীয় বোধ থেকেই শিল্পের সৃষ্টি। শিল্প-সংস্কৃতিকে ধর্ম থেকে আলাদা করা যাবে না। কিন্তু এটা সবার জন্য হয়ে যাওয়ায় অসুবিধা হয়েছে। ওই প্রশ্ন দুটি আমরা সবার জন্য কনসিডার করবো যেন ফলাফলে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় উন্মুক্ত জায়গা, মুক্তচিন্তার জায়গা। সেখানে ধর্ম নিয়ে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানো কখনোই সহ্য করা হবে না। প্রশ্নকর্তা, মডারেটরসহ এর সাথে জড়িত সকলকে জবাবদিহী করা হবে বলে তিনি জানান।
Leave a reply