সময়টা ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রোজ বুধবার সকাল ৯টা। একরাশ স্বপ্ন নিয়ে নিজেদের ভবিষ্যত বুনতে আসা একদল মানুষের জীবন প্রদীপ নিভে যায় মুহুর্তেই। কিছু বুঝে উঠার আগেই আট তলা ভবনের নিচে চাপা পড়ে যায় হাজার হাজার জীবন।
এভাবেই আজকের এ দিনে সাভারের রানা প্লাজা কেড়ে নেয় কয়েক হাজার মানুষের বেচে থাকার স্বপ্ন। ভায়াবহ এ দুর্ঘটনায় নিহত হন ১ হাজার ১১৬ জন শ্রমিক। আহত হন ও পঙ্গুত্ব বরণ করেন আরও প্রায় দুই হাজার শ্রমিক। বিশ্বের পোশাক শিল্পে এতবড় দুর্ঘটনা আর কখনো দেখতে হয়নি কাউকে।
ভয়াবহ এ দুর্ঘটনার শিকার শ্রমিকদের মধ্যে এখনও ৫১ শতাংশ বেকার রয়েছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন এইড। তাদের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকদের ৪৮ শতাংশ শারীরিক এবং ৩৩ দশমিক ৪ শতাংশ শ্রমিক এখনও মানসিকভাবে অসুস্থ। তারা এখনো কোন স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেন না। তবে সম্প্রতি একশন এইডের এই প্রতিবেদনকে অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন বিজিএমইএ’র সভাপতি রুবানা হক।
ভয়াবহ এ দুর্ঘটনার ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও কোন কুলকিনারা হয়নি এ ঘটনায় দায়ের করা কোন মামলার। ভয়াবহ এ ঘটনার পর মোট ১৪টি মামলা হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে অবহেলা-জনিত মৃত্যুর অভিযোগে পুলিশের মামলা, রাজউকের করা ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন এবং নিহত একজন পোশাক শ্রমিকের স্ত্রীর ও পুলিশের দায়ের করা খুনের মামলা।
তবে এর মধ্যে কোন মামলাই এখনো দেখেনি আলোর মুখ।
ভবন ধ্বসের ঘটনায় সেসময় সাভার থানা এসআই ওয়ালী আশরাফ বাদী হয়ে ভবন নির্মাণে ‘অবহেলা ও ত্রুটিজনিত হত্যা’ মামলা দায়ের করেন। ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরমধ্যে আবু বক্কর সিদ্দিক ও আবুল হোসেন মারা যান। ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করলেও এখন পর্যন্ত এ মামলায় একজনেরও সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়নি।
রাজউক কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন ইমারত নির্মাণ আইনে সাভার থানায় আরেকটি মামলা করেন। এতে ভবনের মালিক সোহেল রানা সহ মোট ১৮ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় স্বাক্ষী রাখা হয় ১৩০ জনকে। ২০১৬ সালের ১৪ জুন ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করলেও এ মামলায়ও এখন পর্যন্ত একজনেরও সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি।
Leave a reply