গাইবান্ধা প্রতিনিধি:
বগুড়ার ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস) নামে একটি এনজিও’র ঋণ খেলাপির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যেতে হয়েছে গাইবান্ধার হতদরিদ্র পরিবারের আকলিমা বেগম ও রশিদা বেগম নামে দুই গৃহবধূকে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে দুই গৃহবধূকে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এর আগে বুধবার রাতে নিজ বাড়ি থেকে তাদের গ্রেফতার করে সদর থানা পুলিশ।
গ্রেফতার আকলিমা বেগম (২৮) গাইবান্ধা সদর উপজেলার তরফকাল গ্রামের দিনমজুর আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী ও রশিদা বেগম (২৬) একই গ্রামের শাহিনুর মিয়ার স্ত্রী।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মো. শাহারিয়ার জানান, আদালত থেকে আসা গ্রেফতারি পরোয়ানায় আকলিমা ও রশিদাকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়। আদালতের বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
টিএমএসএস’র দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়, টিএমএস’র গাইবান্ধার একটি শাখা থেকে ২০০৮ সালে আকলিমা বেগম ১৬ হাজার ৮৭৫ টাকা ও ২০০৭ সালে রশিদা বেগম ১৩ হাজার ৫০০ শত টাকা ঋণ গ্রহণ করেন।
এরপর তারা দুজনে কয়েক মাস সাপ্তাহিক কিস্তি দিলেও পরে আর কিস্তি দেয়নি। কিস্তি আদায়ে মাঠকর্মীরা তাগাদা দিলেও টাকা দিতে পারেননি আকলিমা ও রশিদা বেগম। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে গাইবান্ধা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতে আকলিমা বেগম ও রশিদা বেগমকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে এনজিওটি।
মামলাটি আদালতে ৫ বছর চলার পর ২০১৭ সালে ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করার দায়ে আকলিমা ও রশিদা বেগমকে ৬ মাস করে সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেয় আদালত। একই সঙ্গে ১ হাজার টাকা জরিমানি ও অনাদায়ে আরও ১ মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেয় আদালত।
তবে এ নিয়ে আকলিমা বেগমের স্বামী আব্দুর রাজ্জাকের অভিযোগ, এনজিও’র তৎকালীন মাঠকর্মী মশিউর রহমান ঋণ উত্তোলনের সময় ভাগে কিস্তি দেয়ার কথা বলে তার স্ত্রীর কাছ থেকে ঋণের ৪ হাজার টাকা কেটে নেন। পরে সেই টাকা না দিয়ে আকলিমার দেয়া কিস্তির টাকা নেয়ার পর সিটে না তুলে শুধুমাত্র পাস বইয়ে কিস্তি তুলে দেয়। পরে নিরীক্ষা করার কথা বলে পাস বই নিয়ে যাওয়ার পর তালবাহানার এক পর্যায়ে মশিউর চাকরি ছেড়ে চলে যায়।
এ ব্যাপারে পরবর্তী মাঠকর্মীদের জানানো হলেও বিষয়টি সমাধান না করে মামলা করা হয়। এছাড়া রশিদা বেগমের স্বামী শাহিনুর মিয়াও একই অভিযোগ। তিনি বলেন, এনজিওর মাঠকর্মী মশিউরের কারণেই তাদের ঋণ বকেয়া পড়ে। বিষয়টি সমাধানে বারবার অন্য মাঠকর্মীসহ কর্মকর্তাদের জানালেও সমাধানের কোন উদ্যোগ নেয়নি। এছাড়া টাকা পরিশোধে কোন নোটিশ না দিয়ে আদালতে মামলা করে এনজিওটি।
এদিকে, আকলিমা ও রশিদাকে গ্রেফতারের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদের স্বামীসহ অভিভাবকরা টিএমএসএস’র এনজিওটির স্থানীয় শাখা কর্মকর্তাদের শরণাপন্ন হন। এসময় টাকা পরিশোধ করলে আসামিদের ছেড়ে দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়। আশ্বাসের পর চড়া সুদে টাকা নিয়ে রশিদ মুলে পাোনা পরিশোধ করেন স্বজনরা। কিন্তু টাকা পরিশোধ করলেও শেষ পর্যন্ত তাদের আর ছেড়ে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ স্বজনদের।
তবে এ নিয়ে টিএমএসএসে’র স্থানীয় শাখা অফিসে যোগাযোগ করা হলে মাঠকর্মী ও কর্মকর্তারা কথা বলতে রাজি হয়নি। পরে বগুড়া হেড অফিসে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলেও বিষয়টি নিয়ে অফিসে গিয়ে সরাসরি কথা বলার জন্য বলা হয়।
Leave a reply