আগামী ১৪ জুলাই লর্ডসের ময়দানে কার হাতে উঠবে শিরোপা, তা সময়ই বলে দেবে। তবে চলতি আসরের লিগপর্ব শেষ হওয়ার আগেই উপসংহারে পৌঁছে গেছেন ক্রিকেটবোদ্ধারা। সবাই এক সুরে বলছেন, ‘এই বিশ্বকাপ সাকিব আল হাসানের।’ কিংবদন্তি সাকিবকে নিয়ে গোটা ক্রিকেটবিশ্ব এখন সরগরম।
দাপুটে পারফরম্যান্সে একের পর এক রেকর্ড লুটোপুটি খাচ্ছে সাকিবের পায়ে। ম্যাচ জিতিয়ে, ব্যবধান গড়ে দিয়ে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের ছাপ রেখে যাচ্ছেন তিনি। আসরে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের তিনটি জয়েই ম্যাচসেরা সাকিব।
বিশ্বকাপের শুরু থেকেই মুগ্ধতা ছড়াচ্ছেন ব্যাটসম্যান সাকিব। সোমবার সাউদাম্পটনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ৬২ রানের দাপুটে জয়ে বোলার সাকিব ছাপিয়ে গেছেন ব্যাটসম্যান সাকিবকে।
ব্যাট হাতে ফিফটির পর ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে ২৯ রানে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন। সাকিবের আগে বিশ্বকাপে এক ম্যাচে ফিফটি ও পাঁচ উইকেটের একমাত্র কীর্তি ছিল ভারতের যুবরাজ সিংয়ের (২০১১ বিশ্বকাপে)। আরও কিছু গর্বের রেকর্ডে অনন্য সাকিব। বিশ্বকাপে সব মিলিয়ে অন্তত এক হাজার রান ও ৩০ উইকেটের ডাবল নেই আর কারও।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে সাকিবই প্রথম ক্রিকেটার, যিনি এক আসরে অন্তত ৪০০ রানের পাশাপাশি ১০ উইকেট নিয়েছেন। শেষ দুই ম্যাচে ভারত ও পাকিস্তানকে হারিয়ে এবং বাকি সব সমীকরণ মিলিয়ে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে যেতে পারলে নিশ্চিতভাবেই বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার উঠবে সাকিবের হাতে।
শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ যদি সেমির সমীকরণ মেলাতে না পারে, তবুও ইতিহাসের পাতায় সোনার হরফে লেখা থাকবে সাকিবের নাম। বাংলাদেশ দলের ভারতীয় স্পিন বোলিং কোচ সুনীল যোশি তো বলেই দিয়েছেন, ‘সাকিব একজন কিংবদন্তি। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সে হচ্ছে মিস্টার ধারাবাহিক। সেটা ব্যাটে হোক, বলে হোক কিংবা ফিল্ডিংয়ে।’
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ব্যাটসম্যান মাইক হাসির চোখে এখন পর্যন্ত সাকিবই বিশ্বসেরার সেরা খেলোয়াড়। ক্রিকইনফোর ম্যাচ বিশ্লেষণে সাকিবকে নিয়ে মুগ্ধতা ঝরেছে হাসির কণ্ঠে।
হাসির দেশের মিডিয়ায়ও সাকিব-বন্দনা। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ রিপোর্টের শিরোনাম করেছে, ‘সাকিবের আলোয় ঝলসে গেল আফগানিস্তান। সাকিবের সঙ্গে ২০১১ বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় যুবরাজ সিংয়ের তুলনা করেছেন ভারতের সাবেক পেসার জহির খান, ‘একটি দলকে টেনে তোলার আদর্শ উদাহরণ হতে পারে সাকিব। সে ঠিক যুবরাজ সিংয়ের মতো টুর্নামেন্ট পার করছে। ২০১১ বিশ্বকাপে প্রতি ম্যাচেই ব্যাটে-বলে অবদান ছিল যুবরাজের। এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে ঠিক সেই কাজটাই করছে সাকিব। প্রতি ম্যাচেই যেন নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে সে।’
এদিকে ভিভিএস লক্ষ্মণ তার টুইটারে লিখেছেন, ‘সাকিব যেভাবে কাজ করেন, সেটা আমি ভালোবাসি, এত পাওয়ার পরও বিনয়ী ও ভদ্র একজন ক্রিকেটার।’ লক্ষ্মণ তার টুইটে সাকিবকে ‘রোল মডেল’ আখ্যা দিয়েছেন। তার এই টুইট রিটুইট করে সহমত জ্ঞাপন করেছেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদও শুভ কামনা জানিয়েছেন সাকিবকে।
আইপিএলে কলকাতা নাইটরাইডার্সের সতীর্থ মনোজ তিওয়ারি তাকে বাংলাদেশের পিলার উপাধি দেন। তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রতি সাকিবের অবদান অস্বাভাবিক ভালো।’ ক্রিকেট বিশ্লেষক ও লেখক বোরিয়া মজুমদার তার টুইটারে লেখেন, ‘সাকিব আল হাসান এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার।’ ডিএনএ ইন্ডিয়া লিখেছে, ‘সুপারম্যান সাকিব, অলরাউন্ডারের রেকর্ড-বন্যায় ভেসে গেল আফগানিস্তান।’
বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে যাবে কি না, সেটা জানতে এখনও সময় লাগবে। কিন্তু এই বিশ্বকাপ যে সাকিবের, তা প্রতি ম্যাচে বুঝিয়ে দিচ্ছেন তিনি। পাকিস্তানের সাবেক পেসার শোয়েব আখতার লিখেছেন, ‘কেউই সাকিবকে তারকা মনে করে না। কিন্তু সাকিব যে পর্যায়ে যাচ্ছে, সেই পর্যায়ে খুব কম ক্রিকেটার গেছে।’ আইপিএলের দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদে সাকিবের কোচ টম মুডি বলেন, ‘চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে; কিন্তু সাকিব ক্রিকেটবিশ্বকে বলে যাচ্ছে, সে খেলাটির সেরা অলরাউন্ডার। পরিসংখ্যান মিথ্যে বলে না।’
আইসিসির টুইটার ও ফেসবুক পেজেও দেখা গেছে সাকিবের সরব উপস্থিতি।
Leave a reply