অতিরিক্ত সময় ১০ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও শেষ হচ্ছে না যাত্রাবাড়ী পার্কের উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণ কাজ।
প্রকল্পের কাজের মেয়াদ ২০১৮ সালের আগস্ট ও দ্বিতীয় দফায় চলতি বছরের জুনে বর্ধিত করা সময়ও শেষ হয়েছে।
ঠিকাদারের খামখেয়ালি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) তদারকি না থাকায় দেড় বছর ধরে পার্কটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
কাজে ধীরগতি, অনিয়ম ও গুণগত মান নিয়েও বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ এবং চরম হতাশা দেখা দিয়েছে।
ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন জল সবুজে ঢাকা প্রকল্পের আওতায় ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা পার্কে জনতার মুখোমুখি সভায় ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের যাত্রাবাড়ী মোড়ে একটি আধুনিক পার্ক ও ওয়ার্ডের অলিতে গলিতে এলইডি লাইট, সিসি ক্যামেরা স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন।
মেয়র প্রতিশ্রুতি রক্ষায় যাত্রাবাড়ী মোড়ে পার্ক নির্মাণের জন্য ৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন। পার্ক নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পেয়েছে জেভি লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
পার্কে থাকবে ৬০ থেকে ৭০ ফুট উঁচু একটি টাওয়ার। টাওয়ারে থাকবে আধুনিক একটি ঘড়ি ও বিভিন্ন জেলার নাম। বাচ্চাদের খেলার জন্য বিভিন্ন রাইডস, ওয়াকওয়ে, বাউন্ডারি ওয়াল, অত্যাধুনিক পুলিশ বক্স, লাইব্রেরি, ফুটপাত ও বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।
মেয়রের পক্ষে ডিএসসিসি ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আবুল কালাম (অনু) ২০১৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৮ সালের আগস্টে পার্কের কাজ সম্পন্নের সময় শেষ হয়েছে।
পরে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। অতিরিক্ত সময় ১০ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও কাজ শেষ হচ্ছে না। কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে তাও অনিশ্চিত।
ঠিকাদার দেড় বছর ধরে পার্কের চারপাশে টিনের বেড়া দিয়ে রেখেছে। পার্কের ভেতরে গর্ত করে রাখা হয়েছে। ময়লা পানি জমে আছে। ঘাস, ময়লা-আবর্জনা ও নির্মাণসামগ্রী পড়ে আছে।
যাত্রাবাড়ী মোড়ের ফুটপাত ব্যবসায়ীরা পার্কটিকে ভ্যানগাড়ির গ্যারেজ ও ময়লার ভাগাড়ে পরিণত করেছে। মাদক সেবনকারী ও ভবঘুরেদের নিরাপদ আস্তানা হিসেবে পার্কটি ব্যবহার হচ্ছে।
এসব ঘটনায় এলাকার শিশু-কিশোরসহ বাসিন্দাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, আগে মাঠটিতে দোলনায় দোল খেতাম, খেলাধুলা করতাম, দৌড়াতাম, হাঁটতাম, ঘাসে বসে সময় কাটাতাম। দেড় বছর ধরে সংস্কারের নামে মাঠটি আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
তারা আরও বলছেন, বুকভরা আশা করেছিলাম সুন্দর একটি পার্ক হবে। শিশু-কিশোরসহ সবার জন্য একটি বিনোদন কেন্দ্র হবে। সে-ই আশা যেন গুড়েবালি।
এদিকে নির্মাণ কাজের সময়সীমা প্রায় শেষের দিকে হলেও পার্কের কাজের লাইব্রেরির দ্বিতল ভবন, বাউন্ডারি ওয়ালের ফাউন্ডেশন, পানির লাইনের কাজ হয়েছে। যা কাজের ৫০ ভাগ মাত্র।
ডিএসসিসি ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আবুল কালাম (অনু) বলেন, নির্মাণ কাজের সময়সীমা প্রায় শেষ। কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে তা অনিশ্চিত। জনগণের নিকট ওয়াদাবদ্ধ আমরা।
অথচ পার্কের কি কাজ হচ্ছে, কেমন কাজ হচ্ছে, কিছুই জানার মত বা তদারকির দায়-দায়িত্ব আমাদের কাউন্সিলরদের হাতে নেই। পার্কের কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। ওয়ার্ডবাসী যাতে দ্রুত এর সুফল ভোগ করতে পারে সেজন্য মেয়রের জরুরি হস্তক্ষেপের দাবি জানান তিনি।
জেভি লিমিটেডের ইঞ্জিনিয়ার অসিতবালা বলেন, পার্কের কিছু আইটেমে ড্রয়িং পরিবর্তন করা হয়েছে। পার্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণে একটি স্টিল ট্রাকচারের টাওয়ার হবে। যা জাপান থেকে আনা হবে। সে কারণে বিলম্ব হচ্ছে।
ডিএসসিসি অঞ্চল-৫ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মিঠুন চন্দ্র শীল বলেন, যাত্রাবাড়ী পার্কের ডিজাইনে কিছু পরিবর্তন, পরিবর্ধন করা হয়েছে।
সে কারণে কাজে বিলম্ব হয়েছে। এখন সে জটিলতা কেটে গেছে। ঠিকাদার যাতে কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করে সে জন্য তাকে বলা হয়েছে।
Leave a reply