কাজী মনিরুজ্জামান, শরীয়তপুর:
চার বছরের শিশু বনে গেছেন পীর! তার আবার রয়েছে কয়েক শত মুরিদ, ভক্ত আর আশেকান। ভক্তরা গেলেই হাতে ধরিয়ে দেয় একটি সিগারেট। চিকিৎসা নিতে হলে হাদিয়া দিতে হয় ১০১ টাকা। আর আগরবাতি, মোমবাতি, ম্যাচ ও এক প্যাকেট সিগারেট তো বাধ্যতামূলক। শুধু এগুলো বিক্রির জন্যই বাড়ির মধ্যে খোলা হয়েছে একটি দোকান। প্রতি বৃহস্পতিবার আয়োজন করা হয় জলসার। রাতভর চলে গান বাজনা আর ভুড়িভোজ। বাড়ির মধ্যেই চলছে মাজার নির্মাণের প্রস্তুতি।
এই ‘বিড়িবাবা’ হলেন শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কোরালতলি গ্রামের আলী আহম্মদ চৌকিদারের কনিষ্ঠ পুত্র আব্দুর রহমান গফুর । এখন সে এলাকায় গফুর বাবা নামে বেশ পরিচিত। কেউ কেউ শখ করে বিড়িবাবাও বলেও ডেকে থাকেন।
আলী আহম্মদের তিন মেয়ের পর এই ছেলের জন্ম হয়। পেশায় তিনি একজন চা বিক্রেতা। পাশের শিংজালা বাজারে তার ছোট্ট চায়ের দোকান রয়েছে। কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার ঋণ নিয়েছেন তিনি। ঋণের চাপে এখন আলী আহম্মদ জর্জরিত বলে জানান স্থানীয়রা।
বাড়িতে ঢুকতেই দেখা গেলে ২০ থেকে ২৫ জন অপেক্ষা করছে। তাদের একজন কমলা বেগম। এসেছেন ডামুড্যা উপজেলা থেকে। সাথে আট বছরের এক প্রতিবন্ধী মেয়ে। কথা হয় কমলার সাথে। তিনি জানান, অনেকের কাছেই শুনেছেন গফুর বাবার গায়েবি কথা। সে নাকি প্রতিবন্ধী ভালো করে দেয়। তাই মেয়েকে নিয়ে এসেছেন চিকিৎসা নিতে। একশত দশ টাকা, এক প্যাকেট সিগারেট, ম্যাচ, মোমাবাতি আর আগরবাতি হাদিয়াসহ অভিযোগ দিয়ে গেছেন। এক সপ্তাহ পর আসতে বলেছেন বাবা।
ওই ছোট্ট ছেলেটি এসব কথা বলেছে এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, না, ওনার পাশে অনেক খাদেম আছেন তারা বলেছেন।
এ বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলতে চাই কেউই মুখ খুলেনি। গফুরের বাবা আলী আহম্মদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রামভদ্রপুর ইউনিয়নের একজন সদস্য বলেন, ছোট্ট শিশু দিয়ে সব ভণ্ডামি চলছে। পরিবারের সবাই মিলে এখন ব্যবসা খুলে বসেছে। শুরুর দিকেই আমি বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়ে ছিলাম, তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এমন প্রতারণা বন্ধ হওয়া উচিত।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ বলেন, আপনার মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারলাম। আমি প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকায় অবস্থান করছি। ভেদরগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানাবো। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a reply