আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ‘বুড়ো আঙুল’ দেখিয়ে পবিত্র ভূমি জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিলো যুক্তরাষ্ট্র। পুরো বিশ্বকে পাশ কাটিয়ে ইসরায়েলের প্রতি নিজেদের পক্ষপাতের নজির স্থাপন করলো ট্রাম্প প্রশাসন। বুধবার, সব বির্তক-সমালোচনা উপেক্ষা করে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
শুধু তাই নয়, আরও আগেই ইসরায়েলের এ দাবি মেনে নেয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প। দাবি করেন, এখনো দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করছে তার প্রশাসন। ট্রাম্প বলেন, স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীন রাজধানী গঠনের অধিকার রয়েছে ইসরায়েলের।
ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের পরপরই বিক্ষোভ শুরু হয় ফিলিস্তিনজুড়ে। হুঁশিয়ারি দেয়া হয়, কোনোভাবেই মানা হবে এ সিদ্ধান্ত। ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসও মার্কিন প্রশাসনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত জেরুজালেমের মর্যাদা নষ্ট করতে পারবে না; কেননা জেরুজালেম ফিলিস্তিনিদের। এখানে আইনতভাবে ইসরায়েলের কোন অধিকার নেই। এ সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না ফিলিস্তিনিরা। এটি সহিংসতাকে আরও উস্কে দেবে।
মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদি তিন ধর্মের মানুষের কাছেই পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী স্বীকৃতিতে, বিক্ষোভ হয়েছে সিরিয়া, তুরস্ক, লেবাননসহ অন্যান্য মুসলিম দেশেও। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হওয়ার শঙ্কাও জানিয়েছেন নেতারা।
জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ তার প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানে জেরুজালেম অবিচ্ছেদ্য অংশ। আরব দেশগুলোর উদ্বেগের কথা উপেক্ষা করেই এ সিদ্ধান্ত নিলেন ট্রাম্প। এতে শান্তির পথ বন্ধ হয়ে গেল। মুসলিমদের দাবিকে অগ্রাহ্য করে এ সিদ্ধান্ত যুদ্ধ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেবে।
ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তকে দুঃখজনক আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘ। কেননা, ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়া হলেও, জেরুজালেম বিষয়ে একক সিদ্ধান্ত নেয়ার কোন বিধান ছিল না। একপাক্ষিক পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন ইউরোপীয় অনেক নেতাও।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরন ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে মর্মান্তিক বলে উল্লেখ করেন। বলেন আন্তর্জাতিক আইন এবং নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনা বিরোধী এটি। পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতেই দুই রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধান এবং জেরুজালেমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
শুরু থেকেই পূর্ব জেরুজালেমকে নিজেদের ভবিষ্যত রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে মানে ফিলিস্তিনিরা। অথচ পুরো অঞ্চলকেই নিজেদের দাবি করে আসছে ইহুদিরা। আর ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ৭০ বছর পর সেই অন্যায্য দাবিকেই প্রথম স্বীকৃতি দিল যুক্তরাষ্ট্র।
Leave a reply