বরগুনার আলোচিত রিফাত হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
রোববার আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করা হয়। আবেদনে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড হয়েছেন সুফিয়া খাতুন।
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর অবকাশকালীন চেম্বার আদালতে এ আবেদনের শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, মিন্নির জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আজ (রোববার) আবেদন করেছে। সোমবার চেম্বার আদালতে শুনানি হতে পারে।
হাইকোর্ট মিন্নিকে জামিন দেয়ার পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারোয়ার হোসাইন বাপ্পী আপিল করার কথা বলেছিলেন।
রোববার এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বাপ্পী বলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিষয়ে আমি অ্যাটর্নি অফিসকে নোট দিয়েছি। অফিস সিদ্ধান্ত নেবে।
রোববার সন্ধ্যায় মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, মিন্নির জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের কোনো কপি এখনো পাইনি।
এর আগে রোববারই বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের স্বাক্ষরিত মিন্নিকে দেয়া জামিনের ৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।
গত ২৯ আগস্ট দুই শর্তে মিন্নিকে জামিন দেন হাইকোর্ট। দুই শর্ত হল- ১. জামিনে থাকাবস্থায় মিন্নি তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের জিম্মায় থাকবেন; ২. জামিনে থাকাবস্থায় তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। এই দুই শর্তের ব্যত্যয় ঘটলে মিন্নির জামিন বাতিল হবে বলে রায়ে উল্লেখ করেন হাইকোর্ট।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ আগস্ট মিন্নির জামিনের বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ বলে ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। তবে জামিনে মুক্ত হওয়ার পর মিন্নিকে মিডিয়ার সঙ্গে কথা না বলার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
গত ২৬ জুন রিফাতকে বরগুনার রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়। পরদিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন, তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল মিন্নিকে। পরে মিন্নির শ্বশুর তার ছেলেকে হত্যায় পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করলে ঘটনা নতুন দিকে মোড় নেয়।
গত ১৬ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
পরদিন আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে পাঁচদিনের রিমান্ডে পাঠান। রিমান্ডের তৃতীয় দিন শেষে মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হলে সেখানে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলে পুলিশ জানায়।
তার আগের দিনই পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘মিন্নি হত্যাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা এবং হত্যা পরিকল্পনাকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে মিন্নির যুক্ত থাকার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।’
মিন্নি পরে জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে। মিন্নির বাবা অভিযোগ করে আসছেন, ‘নির্যাতন করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে’ মিন্নিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে পুলিশ। এর পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের হাত আছে বলেও তার দাবি।
বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিন্নির জামিন আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ার পর গত ৫ আগস্ট হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবীরা।
Leave a reply