অভিযোগ যেন পিছু ছাড়ছেই না ফেসবুকের। ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা তথ্য কেলেঙ্কারির পর থেকে এখন পর্যন্ত নানা সময়ে নানা অভিযোগ উঠছেই সামাজিক যোগাযোগ জায়ান্ট ফেসবুকের বিরুদ্ধে।
এবার আবারও তথ্য ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে ফেসবুকের বিরুদ্ধে। জানা যায়, প্রায় ৪২ কোটি ব্যবহারকারীর ফোন নম্বর ফাঁস হয়েছে ফেসবুকের ডেটাবেজ থেকে।
এক প্রযুক্তি পোর্টাল প্রতিবেদনে জানিয়েছে, একটি ডেটাবেজে প্রায় ৪১.৯ কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর প্রোফাইলের সঙ্গে জড়িত ফোন নম্বর পাওয়া গেছে। আর এ ডাটাবেজটি খুঁজে পেয়েছে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক সন্যম জৈন।
ফেসবুকে অ্যাকাউন্টের সুরক্ষার স্বার্থে ব্যবহারকারীদের ফোন নম্বর দিতে হয়। সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ফোন নম্বর নেয়ার বিষয়টিও অনৈতিক। তাছাড়া ফেসবুকের কাছে এমনিতেই ব্যবহারকারীর নাম, জন্মদিন, লিঙ্গ, দেশ ইত্যাদি সম্পর্কিত একাধিক স্পর্শকাতর তথ্য সংরক্ষিত থাকে। এভাবে সারা বিশ্বের বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারীদের তথ্য চলে এসেছে ফেসবুকের হাতে। সেই বিষয়টি নিয়েই বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা।
জানা যায়, ডাটাবেজে থাকা ৪২ কোটি ব্যবহারকারীর ফোন নম্বরের মধ্যে প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি অ্যাকাউন্ট যুক্তরাষ্ট্রের, ভিয়েতনামের ৫ কোটি এবং ব্রিটেনের ২ কোটি। বাকি অ্যাকাউন্ট অন্যান্য দেশের। কিন্তু কীভাবে এ সংখ্যক ব্যবহারকারীর ফোন নম্বর গেল ওই ডাটাবেজে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রযুক্তি মহলে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যবহারকারীদের ফোন নম্বর যুক্ত সার্ভারটিতে কোনো পাসওয়ার্ড প্রোটেকশন ছিল না। ফলে যে কোনো ব্যক্তি সেই ডেটাবেজের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য দেখতে পারতেন।
ফেসবুক ফোন নম্বর ফাঁসের এ ঘটনা স্বীকার করে নিলেও এক মুখপাত্র জানান, ওই ডাটাবেজে একই নম্বর একের অধিকবার ছিল তাই সংখ্যাটি এত বেশি মনে হচ্ছে; আদতে এ সংখ্যা ২০ কোটির বেশি নয় বলে তার দাবি। আরও বলেন, তথ্যগুলো বেশ পুরনো। বর্তমানে ফেসবুকের নিরাপত্তাসংক্রান্ত সেটিংসে কিছু পরিবর্তনের পর ফোন নম্বরের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির প্রোফাইলের খোঁজ পাওয়া সম্ভব নয়। তথ্যগুলো সরিয়ে নেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, এর ফলে কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য বা অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়নি।
ফেসবুকের বিরুদ্ধে তথ্য ফাঁসের অভিযোগ নতুন নয়। গত মে মাসেই প্রায় ৪৯ লাখ ব্যবহারকারীর তথ্য ফাঁসের অভিযোগ ওঠে ফেসবুক মালিকানাধীন আরেকটি সামাজিক মাধ্যম ইনস্টাগ্রামের বিরুদ্ধে। এরপর আবারও একই মাধ্যমের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে প্রায় ৫ কোটি ব্যবহারকারীর তথ্য ফাঁসের। জানা গেছে, এ ব্যক্তিগত তথ্যের মধ্যে অধিকাংশই সেলিব্রিটি, প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং ব্র্যান্ডের তথ্য ফাঁস হয়েছে। আবার সহজেই সেসব তথ্য ইন্টারনেটে পাওয়া যাচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে ফাঁস হওয়া তথ্যগুলো এতদিন পর্যন্ত সার্ভারে অরক্ষিত রাখা ছিল। এর মধ্যে ব্যবহারকারীদের নানা ব্যক্তিগত তথ্যও রয়েছে। ওই সময় জানা যায়, গত এক বছর ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীদের তথ্য চুরি করেছে স্যান ফ্রান্সিসকোর ওই মার্কেটিং সংস্থা। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা তথ্য কেলেঙ্কারির পরও শিক্ষা নেয়নি মার্ক জাকারবার্গের সংস্থা।
Leave a reply