পরিবহন থেকে চাঁদাবাজির ঘটনায় গত সপ্তাহে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা করেছে পুলিশ। মামলায় আসামি করা হয় ৮ জনকে। তার মধ্যে একজনের নাম সুমন।
কিন্তু পুলিশ অন্য এক সুমনকে আটক করে মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে এবং নগদ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে বাকি টাকা পরে দেবে- এমন চুক্তিতে তাকে ছেড়ে দেয়। এরপর থেকে ঘুষের বাকি টাকার জন্য সুমনের বাসায় প্রতিদিন তাগাদায় যাচ্ছে পুলিশ। সাভারের হেমায়েতপুর ট্যানারি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এমারত হোসেনের বিরুদ্ধে এমন বিচিত্র গ্রেফতার বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২৭ আগস্ট রাতে হান্নান নামের এক অটোরিকশাচালক সাভারের হেমায়েতপুর স্ট্যান্ডে পৌঁছলে ৭-৮ জন তার কাছে ৬০ টাকা চাঁদা দাবি করে। তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তারা সবাই মিলে তাকে মারধর করে। তার কাছ থেকে ৫২০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ সময় টহলরত পুলিশ এগিয়ে এলে অন্য সবাই পালিয়ে গেলেও ধাওয়া করে ঈমান আলী নামের এক চাঁদাবাজকে টাকাসহ হাতেনাতে আটক করে। পরে অটোরিকশাচালক হান্নান বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় ৮ জনকে। আসামিরা হচ্ছেন আতর আলীর ছেলে ঈমান আলী (৬৫), আবদুস সামাদের ছেলে আবীর মাসুম (৩২), আবদুল হামিদ শেখের ছেলে ইমন শেখ (৩৫), ঝাউচর এলাকার আজিবর রহমান (৩৮), ধল্লা বাস্তা এলাকার আহাদ মাসুদ (৩৫), কোরবান আলীর ছেলে সুমন-১, হেমায়েতপুর এলাকার রুবেল (৩২) ও সুমন-২ পিতা অজ্ঞাত। অভিযুক্তদের মধ্যে ঈমান আলীকে গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
যোগাযোগ করা হলে মামলার বাদী হান্নান বলেন, হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন জামাল ক্লিনিকের সামনে অবস্থান নিয়ে আসামিরা অটোরিকশা, সিএনজি ও ট্রাক থেকে প্রতিদিন ৬০ থেকে ১০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করেন। চাঁদার টাকা না দিলে তারা চালকদের মারধর করেন। বিষয়টি সবাই জানে কিন্তু কেউ কিছু বলার সাহস পায় না। সংবাদ সংগ্রহে হেমায়েতপুর হরিণধরা এলাকার বাসিন্দা সুমনের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, তিনি পেশায় একজন পরিবহন ব্যবসায়ী।
তিনি দাবি করেন, এই চাঁদাবাজির ঘটনার সঙ্গে তিনি কোনোভাবেই জড়িত নয়। কিন্তু হেমায়েতপুর ট্যানারি ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) এমারত হোসেন ৩১ আগস্ট শুক্রবার রাতে সুমনকে তার বাড়ি থেকে আটক করেন। পরে তাকে ট্যানারি ফাঁড়িতে নিয়ে সারারাত আটকে রাখা হয় এবং মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা দাবি করা হয়। পরে উপায় না পেয়ে তিনি পুলিশকে নগদ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে বাড়ি চলে আসেন।
ঘুষের বাকি টাকার জন্য পুলিশ বাড়িতে তাগাদা দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সুমন বলেন, কী বলব ভাই, পুলিশ আইনের লোক। তারা যা করেন, সব ঠিক। যত দোষ আমাদের। টাকার জন্য মামলার অতিরিক্ত লোকজনকে হয়রানি করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হেমায়েতপুর ট্যানারি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) এমারত হোসেন বলেন, সুমনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে তার কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়া হয়নি। ওই এলাকায় একাধিক সুমন থাকায় একটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে মাত্র।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ট্যানারি থানা পুলিশ চাঁদাবাজির ওই মামলার অজুহাতে আফজাল ও ফিরোজ নামের আরও দুইজনকে হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে আটক করে। পরে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে বিশ হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়ে রাত ১১টার পর ছেড়ে দেয়া হয়। এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে সাভার মডেল থানার ওসি এফএম সাইদ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
(সূত্র: দৈনিক যুগান্তর)
Leave a reply