দক্ষিণ আফ্রিকায় আবারও বাংলাদেশি মালিকানাধীন বাড়ি ও দোকানপাটে ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে বিদেশি-বিরোধী আন্দোলনকারীরা। অনেক প্রবাসী বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন সেইফ হোমে। আর্থিক ক্ষতির মুখে দোকান বন্ধ রেখে মালামাল সরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসায়ীদের অনেকে।
গত ক’দিনের সহিংসতায় দুই বিদেশিসহ নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ জনে। নাগরিকদের ওপর হামলার পাল্টা পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে নাইজেরিয়ানরা। দেশটিতে দক্ষিণ আফ্রিকানদের নিয়ন্ত্রণিত কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
কর্মক্ষেত্রসহ সব ধরনের নাগরিক অধিকারে বিদেশিদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে ক’দিন ধরে উত্তাল দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ আর লুটতরাজে চরম অরাজকতার নগরীতে পরিণত হয় জোহানেসবার্গ আর প্রিটোরিয়া। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশিও রয়েছেন। এছাড়া আছেন পাকিস্তানী, নাইজেরিয়ানরা।
গত সপ্তাহে প্রথম দফা সহিংসতার চারদিন পর রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে নতুন করে সহিংস হয়ে ওঠে জোহানেসবার্গ। ছিল ক্ষণে ক্ষণে মিছিল, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। মালভার্ন জুলিস স্ট্রিটে বাংলাদেশি মালিকানাধীন একটি বাড়ি এবং তিনটি দোকানে আগুন দেয় ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় অনেকেই বাড়িছাড়া। কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন সেইফ হোমে।
জানা গেছে, আগস্ট থেকে শুরু হওয়া মাসব্যাপী বিক্ষোভে হামলার শিকার ৫শ’র বেশি বাংলাদেশি মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সব হারিয়ে নিঃস্ব অনেকে। বন্ধ রয়েছে দোকানপাট; সরিয়ে নেয়া হচ্ছে মালামাল।
ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ নূর হোসেন বলেন, “হামলাকারীরা বলে ওদের টাকা, দোকান, কাজ সব নাকি নিয়ে নিয়েছি আমরা। অথচ আমরা এদেশের নিয়ম মেনে চলি। এদেশের মানুষকে শ্রদ্ধা করি। তাদের মতোই টাকার বিনিময়ে মাথার ওপর ছাদ পেয়েছি, পানি-বিদ্যুৎ পেয়েছি। আমরা তো সন্ত্রাসী নই, তাহলে দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষের কী শত্রুতা আমাদের সাথে। যা উপার্জন ছিল, সব শেষ।”
৫ কোটি জনসংখ্যার দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় বিদেশি কর্মী ও ব্যবসায়ী রয়েছেন ৩৬ লাখ। তাদের ৭০ শতাংশই প্রতিবেশী জিম্বাবুয়ে, মোজাম্বিক ও লেসেথোর নাগরিক। যদিও দেশটিতে বিদেশি-বিদ্বেষের মূল শিকার নাইজেরিয়ানরা। প্রতিক্রিয়ায় এবার ক্ষুব্ধ নাইজেরিয়াও। ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে দেশটিতে অবস্থানরত ৬শ’ দক্ষিণ আফ্রিকান নাগরিককে।
নাইজেরিও তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী লিয়া মোহাম্মদ বলেছেন, “দক্ষিণ আফ্রিকার হাই-কমিশনারকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। দেশটিতে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের আফ্রিকা বিষয়ক সম্মেলনও বর্জন করছি। শিগগিরই সেখান থেকে আমাদের নাগরিকদেরও ফিরিয়ে আনবো।”
দক্ষিণ আফ্রিকায় বিদেশিবিদ্বেষী সহিংসতার ঘটনা নতুন নয়। দেশটিতে ২৭ শতাংশ বেকারত্বের দায় এসব বিদেশিদের ওপরই চাপিয়ে আসছে বিক্ষোভকারীরা।
Leave a reply