সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান মার্কিন এক টিভি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি ভুল থেকে শিক্ষা নেবেন।
বিন সালমান বলেন, “এমনকি নবীরাও ভুল করেছেন। তাহলে মানুষ হয়ে কিভাবে আশা করতে পারি যে আমরা ভুল করবো না? গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমরা এসব ভুল থেকে শিক্ষা করবো এবং আর আর সেগুলো পুনরাবৃত্তি করবো না।”
গত রোববার মার্কিন টিভি চ্যানেল সিবিএসকে সাক্ষাৎকার দেন যুবরাজ। সৌধি সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার পর এই প্রথম তিনি কোনো সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন। এতে তিনি সৌদি রাষ্ট্রের নানান দিক নিয়ে কথা বলেন।
মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছেন, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ বাধলে বিশ্ব অর্থনীতিকে বড় ধরনের খেসারত দিতে হবে। এ জন্য সামরিকের চেয়ে ইরানের সঙ্গে রাজনৈতিক সমাধানই শ্রেয় হবে বলে মনে করেন তিনি। তবে সৌদি যুবরাজ এ-ও বলেছেন, ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা বেড়ে গেলে জ্বালানি তেলের দাম ‘অভাবনীয়’ পর্যায়ে চলে যেতে পারে।
যুবরাজ বলেন, ‘ইরানকে থামাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দৃঢ় পদক্ষেপ না নিলে আমরা এমন পরিস্থিতির মুখে পড়ব, যা পুরো বিশ্বের স্বার্থকেই হুমকিতে ফেলে দেবে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের সরবরাহ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেই সঙ্গে তেলের দাম বেড়ে এমন পর্যায়ে যেতে পারে, যা আমরা জীবদ্দশায় দেখিনি।’
৩৪ বছর বয়সী সালমান মনে করেন, সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধ বাধলে তা বিশ্ব অর্থনীতিতে মহাবিপর্যয় ডেকে আনবে। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের মোট জ্বালানি তেলের ৩০ শতাংশ মধ্যপ্রাচ্য থেকে সরবরাহ করা হয়। বিশ্ব বাণিজ্যে এ অঞ্চলের অবদান ২০ শতাংশ। এ ছাড়া চার শতাংশ অবদান রয়েছে বৈশ্বিক জিডিপিতে। এই তিনটি বিষয় বন্ধ হয়ে গেলে কী পরিস্থিতি তৈরি হবে একবার চিন্তা করে দেখুন! কেবল সৌদি আরব কিংবা মধ্যপ্রাচ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, পুরো বিশ্বের অর্থনীতি ধসে পড়বে।’
গত ১৪ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের ‘আবকাইক’ ও ‘খুরাইস’ নামে দুটি তেলক্ষেত্রে ড্রোন হামলা করা হয়। তাত্ক্ষণিকভাবে হামলার দায় স্বীকার করে নেয় ইয়েমেনের ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের অভিযোগ, হামলায় ইরানের হাত রয়েছে। তবে ইরান এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। মূলত এ ঘটনার পর ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়।
তেলক্ষেত্রে হামলার বিষয়ে ইরানের উদ্দেশে সৌদি যুবরাজ বলেন, ‘তাদের কোনো ইতিবাচক উদ্দেশ্য ছিল না। তারা কেবল নির্বোধের মতো বিশ্ব বাজারে তেলের সরবরাহ ৫ শতাংশ কমাতে পেরেছে। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের নির্বোধ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।’
সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারেও প্রশ্ন করা হয় সৌদি যুবরাজকে। খাশোগিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একদমই না। এটা ঘৃণ্য একটা অপরাধ। তবে সৌদি আরবের নেতা হিসেবে হত্যাকাণ্ডের পুরো দায়ভার আমার।’
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে গত ২ অক্টোবর খুন হন যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে যাওয়া সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি। প্রথম দিকে অস্বীকার করলেও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে শেষমেশ সৌদি আরব স্বীকার করে, তাদের এজেন্টরাই খাশোগিকে হত্যা করেছে। তবে অনেকেই মনে করেন, যুবরাজ সালমানের নির্দেশেই খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছে।
সাক্ষাৎকারটি শেষ করার আগে বিন সালমান বলেন তিনি ভুল থেকে শিক্ষা নেবেন। তার ভাষায়, “এমনকি নবীরাও ভুল করেছেন। তাহলে মানুষ হয়ে কিভাবে আশা করতে পারি যে আমরা ভুল করবো না? গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমরা এসব ভুল থেকে শিক্ষা করবো এবং আর আর সেগুলো পুনরাবৃত্তি করবো না।”
Leave a reply