বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসা চেয়েছেন তার মা সায়েরা খাতুন। রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই আকুতি জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে সম্রাটের মায়ের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বোন ফারহানা চৌধুরী।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আমার সন্তানের বাইপাস সার্জারি করে ভাল্ব প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক মদ্যপান করা তার জন্য মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তাই সে জেনে শুনে কখনো মদ পান করবে না। সম্রাটের গ্রেফতারের দশ দিন অফিসেই ছিল না। অফিস ছিল অরক্ষিত। শরীর খারাপ থাকায় অন্যত্র অবস্থান করছিল। তার অফিসে মদ, ইয়াবা পিস্তল কিছুই ছিল না। আমাদের আশঙ্কা এটি পরিকল্পিত সাজানো নাটক ছাড়া কিছুই না।
তিনি আরো বলেন, ঢাকা শহরের প্রতিটি ক্লাব পরিচালনা করার জন্য কমিটি রয়েছে। আমার সন্তান সম্রাট কোনো ক্লাবের পরিচালনা কমিটির সদস্য নয় এবং ডাক গ্রহণকারীও নয়। শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এবং ব্যক্তিগত আক্রোশে তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জড়ানো হচ্ছে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুতি জানাতে চাই, আপনি মমতায়ী জননী, মানবতার মা, সম্রাট আপনার কর্মী। আমি একজন মা হিসেবে আপনার কাছে আকুতি করছি সম্রাটের ভুলত্রুটি ক্ষমা করে ওকে মুক্ত করে দিন এবং তাকে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ করে দিয়ে আমার সন্তানের জীবন রক্ষা করুন।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ২০০৩ সালে সম্রাটকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ১৯৯৯ সালে উপমহাদেশের বিখ্যাত চিকিৎসক দেবী শেঠির অধীনে সম্রাটের ওপেনহার্ট সার্জারির মাধ্যমে ভাল্ব প্রতিস্থাপন করা হয়। তখন থেকে সম্রাট আজ অবধী অসুস্থ শরীর নিয়ে দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, সম্রাটের ভাল্ব প্রতিস্থাপন করার কথা ছিল সিঙ্গাপুরে। কিন্তু ২৮ সেপ্টেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শুভ জন্মদিন উপলক্ষে ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের উদ্যোগে মিলাদ মাহফিল ও রক্তদান কর্মসূচি থাকায় সিঙ্গাপুরে যাওয়া হয়নি।
তাদের দাবি, সম্রাটকে যে স্থান থেকে গ্রেফতার করা হয় সে স্থান থেকে কোনো প্রকার অস্ত্র কিংবা মাদক পাওয়া যায় নাই। কিন্তু আমরা মিডিয়ার সামনে মিডিয়ার মাধ্যমে দেখতে পেলাম তাকে কাকরাইল অফিসে নিয়ে আসা হয় এবং প্রায় ৪ ঘণ্টা ১৭ মিনিট তার অফিসে তল্লাশি করা হয়। তবে সেই তল্লাশি চলাকালে কোনো গণমাধ্যমকর্মীকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। সম্রাটকে নিয়ে অফিসের ভিতরে প্রবেশের সময় বিভিন্ন মিডিয়ায় লাইভ সম্প্রচারে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু লোক কাঁধে ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করে এবং অফিস থেকে বের হওয়ার সময় ওই সকল ব্যাগ লক্ষ্য করা যায়নি।
প্রসঙ্গত, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ৬ অক্টোবর রাতে সম্রাটকে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর সম্রাটের দেওয়া তথ্যমতে পরের দিন দুপুর থেকে তার কাকরাইলের কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় সেখান থেকে একটি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, পাঁচটি গুলি, ১১৬০ পিস ইয়াবা, ১৯ বোতল বিদেশি মদের বোতল ও দুটি ক্যাঙারুর চামড়া উদ্ধার করা হয়। গত ৭ অক্টোবরই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে সম্রাটের ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে অস্ত্র ও মাদক রাখায় সম্রাটের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা করা হয়। এসব মামলায় তিনি এখন কারাবন্দী।
Leave a reply