বেতনভাতা বাড়ানোসহ ১১ দফা দাবিতে মাঠে নেমেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। দাবি-দাওয়া না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা। এ সময়ে সব ধরনের ক্রিকেট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন সাকিব-তামিমরা।
ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে এখন ৭ নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশ। এর পরের দুই স্থানে যথাক্রমে আছে শ্রীলংকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অথচ টাইগারদের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি বেতন পান এ দুই দেশের ক্রিকেটাররা।
বিশ্বের পঞ্চম ধনী ক্রিকেট বোর্ড বিসিবি। এ তালিকায় সবার ওপরে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা (সিএসএ)। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। চতুর্থ স্থানে আছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।
অর্থনৈতিক সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ক্রিকেটারদের সেই অনুযায়ী বেতন-ভাতাদি দেয় না বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)! জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ডের (জেডসি) চেয়ে কম বেতন দেয় তারা। ন্যায্য বেতন দেয়ার তালিকার শীর্ষ ১০ নম্বরেও নেই বিসিবি। ২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ী, সেই তালিকার ১১ নম্বরে তারা। আইসিসির পূর্ণাঙ্গ সদস্য দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের চেয়ে আর কেউই কম বেতন পান না।
বিসিবির বর্তমান কেন্দ্রীয় চুক্তিতে আছেন ১৭ জন ক্রিকেটার। চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে তাদের। গত বছর ক্রিকেটার সংখ্যা ছিল আরও কম, ১০ জন। সর্বোপরি, কেন্দ্রীয় চুক্তিতে ক্রিকেটার সংখ্যা বাড়লেও বেতন কাঠামোয় পরিবর্তন আসেনি। আগের বছরের মতো এবারও ‘এ প্লাস’ শ্রেণির ক্রিকেটাররা পাচ্ছেন মাসিক ৪ লাখ টাকা, ‘এ’ শ্রেণিতে ৩ লাখ, ‘বি’ শ্রেণির ক্রিকেটাররা ২ লাখ টাকা। আর ‘রুকি’ শ্রেণির ক্রিকেটারদের সম্মানী ১ লাখ টাকা।
এটা কেবল বেতন। এর পাশাপাশি ম্যাচ ফি পেয়ে থাকেন সাকিব-তামিমরা। প্রতি টেস্টের ম্যাচ ফি সাড়ে ৩ লাখ। প্রতি ওয়ানডের ম্যাচ ফি ২ লাখ এবং টি-টোয়েন্টির ম্যাচ ফি ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৩৫ হাজার টাকা পান তারা।
বিসিবির চেয়ে আর্থিকভাবে বেশ পিছিয়ে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড (এনজেডসি), উইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড (ডব্লিউআইসিবি) এবং শ্রীলংকা ক্রিকেট বোর্ড (এসএলসি)। অথচ বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের চেয়ে ম্যাচ বাবদ বেশি অর্থ পান তাদের ক্রিকেটাররা।
নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটাররা একটি টেস্ট ম্যাচ খেলে পান প্রায় ৫ লাখ টাকা, উইন্ডিজের ক্রিকেটাররা পান সাড়ে ৪ লাখ টাকা এবং লংকান ক্রিকেটাররা পান প্রায় ৪ লাখ টাকা। এ তালিকায় সবচেয়ে বেশি অর্থ পান ভারতীয় ক্রিকেটাররা। তারা একটি টেস্ট ম্যাচ থেকে পেয়ে থাকেন প্রায় ১৯ লাখ টাকা।
গেল বছর ভারতের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে চুক্তিবদ্ধ হন ২৫ জন ক্রিকেটার। অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হন ২০ জন ক্রিকেটার। এ ছাড়া ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ আছেন ২০ জন ক্রিকেটার। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় খেলোয়াড় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন সাকিব-তামিমরা।
এসব বৈষম্যের প্রতিবাদে সোচ্চার তারা। তাদের মতে, বিশ্বের অন্যান্য ক্রিকেট খেলুড়ে দেশের ক্রিকেটাররা বেশি বেতন, সুযোগ-সুবিধা পান। অপেক্ষাকৃত কম বিত্তশালী বোর্ডের সদস্য তারা। উইন্ডিজ, পাকিস্তান ও শ্রীলংকার চেয়েও পিছিয়ে টাইগাররা।
এছাড়া অন্য দেশের ক্রিকেটাররা বোর্ডের বিজ্ঞাপন বাবদ উপার্জিত অর্থ থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পেয়ে থাকেন। বিসিসিআইয়ের বার্ষিক বিজ্ঞাপন বাবদ উপার্জিত অর্থ থেকে প্রায় ২৬ শতাংশ পান ভারতীয় ক্রিকেটাররা। এমনকি পাকিস্তানের ক্রিকেটাররাও বোর্ডের কাছ থেকে বিজ্ঞাপন বাবদ অর্থ পেয়ে থাকেন। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা বোর্ডের উপার্জন থেকে কোনো প্রকার অর্থ পান না।
Leave a reply