জঙ্গিদের হাতে নিহত লেখক অভিজিৎ রায়ের বিচার দেখে যেতে পারলেন না শিক্ষাবিদ অজয় রায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের সাবেক এই অধ্যাপক সোমবার সকালে মারা গেছেন।
রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে পরিবার।
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা শেষে জঙ্গিদের হাতে নির্মমভাবে হত্যার শিকার বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায়। সেদিন উগ্রবাদীদের হামলার শিকার হয়ে হাতের আঙুল হারান তার স্ত্রী ব্লগার রাফিদা আহমেদ বন্যাও।
এ ঘটনায় মামলা করেন তার বাবা শিক্ষাবিদ অজয় রায়। হত্যাকাণ্ডের চার বছর পর গত ১৩ মার্চ ছয় জঙ্গিকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
গত ১ আগাস্ট আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিচার। অভিযোগ গঠনের পর গত ১১ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর কথা থাকলেও তা হয়নি।
এরপর ৬ অক্টোবর পড়ে সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ, সেদিনও উপস্থিত হননি বাদী অজয় রায়। এরপর ৮ অক্টোবর ছিল সাক্ষ্যগ্রহণের দিন। ওদিনও হাজির ছিলেন না অজয় রায়।
তবে বাদীর সাক্ষ্য ছাড়া মামলার অভিযোগ প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। আসামিদের পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগও তৈরি হয়ে যায়।
অধ্যাপক অজয় রায়কে বারবার সমন পাঠানো হলেও তিনি আদালতে আসতে অনীহা প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে অজয় রায়ের ভাষ্য ছিল, সন্তান হারানোর বেদনা নতুন করে মনে জাগাতে চান না তিনি। ছেলে নিহত হয়েছে, মামলা করা হয়েছে, কেন আবার আদালতে যেতে হবে?
তিনি আরও বলেছিলেন, পুত্র হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে সাক্ষ্য দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। সাক্ষ্য দেয়া হবে বেদনাদায়ক, যা আমি সইতে পারব না।
এরপর গত ২৮ অক্টোর হুইল চেয়ারে করে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন অজয় রায়। তার সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।
কিন্তু বিচারকাজ শুরু হওয়ার ১ মাস ১১ দিন পর না ফেরার দেশে চলে গেলেন এই শিক্ষাবিদ।
তার পরিবার জানিয়েছে, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ২৫ নভেম্বর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হন অজয় রায়। ধীরে ধীরে শ্বাসকষ্ট বাড়লে দুদিন পর তাকে কৃত্রিম শ্বাস দেয়া শুরু হয়। আজ সকালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় মারা যান তিনি।
প্রসঙ্গত অভিজিৎ হত্যা মামলার ছয় আসামি হলেন- আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে জিয়া, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ওরফে শাহরিয়ার, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, আরাফাত রহমান ওরফে সিয়াম ওরফে সাজ্জাদ ওরফে শামস্), আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে আবদুল্লাহ, ব্লগার শফিউর রহমান ফারাবী।
এদের মধ্যে জিয়া ও আকরাম ছাড়া বাকি চার আসামি কারাগারে রয়েছেন। পলাতক জিয়া ও আকরামের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। সেনাবাহিনীর বরখাস্ত মেজর জিয়াকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে।
Leave a reply