খুনের দায়ে একটা হাতিকে ফাঁসি দেয়া হয় এখানে। এ ঘটনার পর পেরিয়ে গেছে ১০০ বছর। কিন্তু এখনও ‘নজিরবিহীন’ এ ঘটনা অত্যন্ত লজ্জার এ শহরের বাসিন্দাদের কাছে। এখনও এটাই এ শহরের পরিচয়…
মাহুতকে খুনের অপরাধে হাতির ফাঁসি দেয়া হয় সে সময়ের শহরের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্কাসের অন্যতম আকর্ষণ মেরি নামের একটি হাতিকে। আজও অপরাধ বোধ যেন কুরে কুরে খায় এ শহরের প্রতিটি বাসিন্দাকে।
বিরলতম এ ঘটনাটি ঘটেছিল আমেরিকার অঙ্গরাজ্য টেনেসির এরউইন শহরে।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে মাত্র ৮ বছর বয়স থেকে সার্কাসে খেলা দেখাতে শুরু করেন চার্লি স্পাইকস। এ সময় চার্লির বাবা চার বছর বয়সী ছোট্ট হাতি মেরিকে কিনে আনেন। অল্প কয়েক দিনেই মেরির সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে যায় চার্লির। একসময় চার্লি স্পার্কস ওয়ার্ল্ড ফেমাস শো নামে আলাদা একটি সার্কাস তৈরি করেন। এ সার্কাসে খেলা দেখাতে শুরু করে মেরি।
দেখতে দেখতে স্পার্কস ওয়ার্ল্ড ফেমাস শো-এর অন্যতম আকর্ষণ হয়ে ওঠে মেরি। নাম বদলে গিয়ে মেরি তখন ‘বিগ মেরি’ হয়ে গেছে। নিঃসন্তান স্পার্কস ও তার স্ত্রী অ্যাডি মিচেল নিজেদের সন্তানের মতোই ভালোবাসতেন মেরিকে। মেরির দেখভালের জন্য একজন মাহুত ছিলেন বটে, তবে চার্লির কথাই বেশি মানত সে।
স্পার্কস ওয়ার্ল্ড ফেমাস শো এবং মেরির বুদ্ধিদীপ্ত কলাকৌশলের খবর দ্রুত আমেরিকার বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে। এরই মধ্যে ভার্জিনিয়ায় খেলা দেখাতে যায় স্পার্কস ওয়ার্ল্ড ফেমাস শো।
সেখানে যাওয়ার আগে কোনো এক অজানা কারণে মেরির পুরনো মাহুত কাজ ছেড়ে চলে যায়। এ সময় মেরির মাহুত হওয়ার জন্য তার ট্রেইনার পল জ্যাকোবের কাছে আবেদন জানান স্থানীয় একটি হোটেলের কর্মচারী ওয়াল্টার রেড এলড্রিজ। নিয়োগ করে এলড্রিজকে হাতি দেখভালের যাবতীয় নিয়ম শিখিয়ে দেয়া হয়।
১২ সেপ্টেম্বর ১৯১৬ খেলা দেখানোর দিন নতুন মাহুত এলড্রিজকে হয়তো মেনে নিতে পারেনি মেরি। ফলে খেলা দেখানোর সময় এলড্রিজের নির্দেশেও তেমনভাবে সাড়া দিচ্ছিল না সে।
বিপাকে পড়ে মেরির মাথায় রডের খোঁচা দিয়ে তাকে বাগে আনার মরিয়া চেষ্টা চালায় এলড্রিজ। আর এতেই মেজাজ হারায় মেরি। এলড্রিজকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে মাটিতে আছাড় মারে মেরি। পা দিয়ে পিষে দেয় এলড্রিজের মাথা।
ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় এলড্রিজের। চোখের সামনে এ ঘটনা দেখে আতঙ্কে সার্কাসের তাঁবু ছেড়ে পালিয়ে যান দর্শকরা। এ খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে চতুর্দিকে। স্থানীয় পত্রপত্রিকায় লেখালেখিও হয় মেরিকে নিয়ে। চার্লি সবাইকেই বোঝানোর চেষ্টা করেন, সে দিনের ঘটনায় দোষ মেরির নয়, এলড্রিজের। কিন্তু চার্লির কথা তখন কেউ শুনতে রাজি হয়নি।
শহরের বেশিরভাগ মানুষ একজোটে মেরিকে ‘মৃত্যুদণ্ড’ দেয়ার সিদ্ধান্তে অবিচল রইলেন। অবশেষে ১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯১৬-এ মেরির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্রেন নিয়ে আসা হল। সেখানে উপস্থিত কয়েকশ’ মানুষ। গলায় শেকল বেঁধে ঝুলিয়ে দেয়া হল মেরিকে।
Leave a reply