চলতি মাসে ৩ শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস

|

জানুয়ারিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আরও দুটি তীব্র এবং একটি মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে। আর এজন্য সরকার ৬৪ জেলার দরিদ্র শীতার্তদের জন্য ৩১ লাখ ৯০ হাজার ৯০০ কম্বল বরাদ্দ করেছে।

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে শৈত্যপ্রবাহ ও সরকারের প্রস্তুতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান কম্বল বরাদ্দের তথ্য জানান। এ সময় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. মোহসিন উপস্থিত ছিলেন।

আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বৃহস্পতিবার বলেন, ‘বছরের প্রথম মাসের প্রথমার্ধেই দেশের অনেক স্থানে বৃষ্টিপাত হবে। ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগ ছাড়া দেশের সব স্থানেই হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শুক্রবার বৃষ্টিপাত আরও বাড়বে। ৬ জানুয়ারি থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের সর্বনিু তাপমাত্রা ও রাতের তাপমাত্রা আরও কমে যাবে।

জানুয়ারিতে আরও দুটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এছাড়া একটি মাঝারি শৈত্যপ্রবাহও বয়ে যেতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘এসব শৈত্যপ্রবাহ চলাকালে বিভিন্ন জেলায় কনকনে শীত অনুভূত হবে। ৩, ৪ ও ৫ জানুয়ারি বৃষ্টিপাত হবে। এরপর তাপমাত্রা ধীরে ধীরে নামতে শুরু করবে এবং শৈত্যপ্রবাহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিরাজমান থাকবে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হবে। রাতের তাপমাত্রা বা সর্বনিু তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলে। আর ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে হবে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ, ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে হবে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।’

শৈত্যপ্রবাহগুলো কখন আসবে- জানতে চাইলে সামছুদ্দিন বলেন, ‘৬ তারিখের পর শৈত্যপ্রবাহ শুরু হবে। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহের দিকে একটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে, মাঝামাঝি সময়ে একটি মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে।

রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ বিভাগ, ঢাকা বিভাগের কিছু অংশ, সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেশি থাকবে। পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের আরেকটি অঞ্চল বাঘাইছড়ি ও এর আশপাশের এলাকায় শীতের তীব্রতা থাকবে। ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের দিকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ থাকবে। ডিসেম্বরের শেষের দিকে সর্বনিু তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায় ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছিল। সেখানেও একই ধরনের অবস্থা বিরাজ করবে।’

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘গত বছর সর্বনিু তাপমাত্রা রেকর্ডে ছিল ২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখানে ঠিক সুনির্দিষ্টভাবে কত ডিগ্রি হবে, এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। আরও সপ্তাহখানেক পরে বলা যাবে। ডিসেম্বরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গিয়েছিল, ডিসেম্বরের শেষ দিকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়।

তাপমাত্রা নেমে যাওয়ার পাশাপাশি সূর্যের আলো কম থাকায় শীতের তীব্রতা প্রচণ্ড ছিল। তাপমাত্রার মাপকাঠিকে হয়তো মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ছিল ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি, কিন্তু সূর্যের আলো কম থাকায় এবং কোথাও কোথাও কনকনে হিমেল বাতাস থাকায় শীতের তীব্রতা সারা দেশেই প্রবলভাবে অনুভূত হয়।’

শৈত্যপ্রবাহ সামনে রেখে সরকারের প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ যাতে শীতে কষ্ট না পায় সেজন্য পোশাক ও খাদ্য বিতরণের কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। দরিদ্র ও অতি দরিদ্র মানুষেরা শীতে বেশি কষ্ট পান, তাদের বিতরণের জন্য এগুলো বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বিতরণ অনেক জায়গায় শুরু হয়েছে। বিতরণ কাজ চলতে থাকবে- যাতে একটি মানুষও শীতে কষ্ট না পান। এ সতর্কতাটা আমরা নিয়েছি। এছাড়া আমাদের অর্থ, কম্বল ও শুকনো খাবারের মজুদ আছে, কোথাও যদি জরুরি প্রয়োজন হয় সেটা মেটানোর সক্ষমতাও আমাদের আছে।’

এনামুর রহমান বলেন, ‘গত মাসের মাঝামাঝি থেকে সারা দেশে তীব্র শীত জেঁকে বসে। অক্টোবরে শীতের পূর্বাভাস পাওয়ার পর প্রত্যেক জেলায় শীতবস্ত্র পাঠিয়ে দিয়েছি। জেলা এবং উপজেলা প্রশাসনের চাহিদা মোতাবেক শীতবস্ত্র সরবরাহ করেছি।’

এছাড়া আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ১১ জানুয়ারি দল থেকে উত্তরাঞ্চল সফরের আয়োজন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ডা. এনামুর রহমান আরও বলেন, দরিদ্র শীতার্তদের জন্য ৩১ লাখ ৯০ হাজার ৯০০ কম্বল সরকার বরাদ্দ করেছে। চলতি মাসে পরপর সম্ভাব্য দুটি শৈত্যপ্রবাহে দেশের মানুষের যাতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হয়, এজন্য সরকার আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে। ৬৪ জেলার দরিদ্র শীতার্তের সাহায্যে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভাণ্ডার থেকে ২৪ লাখ ৬৯ হাজার একশ’ কম্বল এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে আরও সাত লাখ ২১ হাজার ৮০০ কম্বল বরাদ্দ করা হয়েছে।

এছাড়া এবারই প্রথম শীতার্ত শিশুদের মধ্যে শীতবস্ত্র ও শিশুখাদ্য বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। শীতের মতো এমন দুর্যোগেও সরকার শুরু থেকেই দরিদ্র শীতার্ত জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়িয়েছে।

এ পর্যন্ত চলতি অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় শীতবস্ত্র (কম্বল) কেনার জন্য রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, মাগুরা, নড়াইল, ফরিদপুর এবং গোপালগঞ্জে ১৬টি জেলায় এক কোটি ৬৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শিশুদের শীতবস্ত্র কেনার জন্য রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, মাগুরা, নড়াইল, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ এ ২০টি জেলায় ৫৪ লাখ টাকা এবং শিশুখাদ্য কেনার জন্য এ জেলাগুলোতে ২১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

পাশাপাশি রংপুর বিভাগের আট জেলার প্রতিটিতে দু’হাজার করে ১৬ হাজার শুকনো ও অন্য খাবারের কার্টন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এদিকে, সারা দেশে শৈত্যপ্রবাহের কারণে শীতজনিত রোগ-ব্যাধির প্রকোপ বেড়েছে। এখন পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, ১ নভেম্বর থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫৪ দিনে (প্রায় দুই মাসে) সারা দেশের হাসপাতালে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে মোট দুই লাখ ৫৮ হাজার ৬৫৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। একই সময়ে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply