জনপ্রতিনিধিদের কথা কম বলে কাজ বেশি করা উচিত: তাবিথ

|

নির্বাচিত হলে কথা কম বলে নগরের বাসিন্দাদের সমস্যা ও দুর্ভোগের কথা গুরুত্ব দিয়ে তা দ্রুত বাস্তবায়নের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন আসন্ন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন উত্তরে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল।

বৃহস্পতিবার দৈনিক যুগান্তর কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, কেমন ঢাকা চাই, এই প্রশ্ন আমাকে করলে আমি বলব– জনগণকে যে ঢাকা প্রাধান্য দেয়, সেই ঢাকা চাই। যে ঢাকায় জনগণের সম্পৃক্ততা বেশি রয়েছে, সেই ঢাকা চাই।

এই মেয়র প্রার্থী বলেন, জনপ্রতিনিধিদের কথা কম বলে কাজ বেশি করা উচিত। জনগণের দাবি ও কথা না শুনে জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের সাফল্য গাঁথাই আউড়ে যান। নগরবাসীর সুখ-দুঃখ, চাহিদার কথা সেভাবে শুনতে দেখিনি। তাই আমি মনে করি, নগরবাসী কী চায়, সে কথা আগে শুনে এর পর সমাধানের উপায় খোঁজা উচিত।

বেলা ১১টায় ‘কেমন ঢাকা চাই’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম।

এতে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো. আতিকুল ইসলাম, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী (অব.), স্থপতি অধ্যাপক জালাল আহমেদ, ড. মিজানুর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন যুগান্তরের ডেপুটি এডিটর এহসানুল হক বাবু।

ঢাকা শহরের জনসংখ্যা যতই বাড়ছে, সমস্যাগুলো ততই প্রকট আকার ধারণ করছে বলে মন্তব্য করেন তাবিথ আউয়াল। তিনি বলেন, নতুন নতুন আইন করেও ঢাকা শহরের দুর্ঘটনা কমানো যাচ্ছে না। ফলে নাগরিকরা অকালে প্রাণ হারাচ্ছেন নিয়মিতই। এ ছাড়া ঢাকা দিন দিন আরও বেশি অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিএনপির এই মেয়র প্রার্থী বলেন, পরিসংখ্যান মতে, বর্তমানে ঢাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৫ হাজার লোক বসবাস করেন। আর এই বিপুল জনগোষ্ঠীর সুযোগ-সুবিধার দেখভাল ও সমস্যা দূরীকরণ বড় কোনো বিষয় হলেও; তা সমাধানযোগ্য।

ঢাকা শহরের এসব সমস্যা নতুন কিছু নয় জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক আগে থেকেই যেসব ভোগান্তি আর অভিযোগের কথা নগরবাসী বলে যাচ্ছেন, তা এখনও দৃশ্যমান। আমি মনে করি, এখন এসব সমস্যা আরও বড় আকার ধারণ করেছে।

এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, বিগত বছরগুলোতে দেখেছি– ঢাকা সিটির কোনো সমস্যার নিরসনে প্রথম দিকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। একেবারে অন্তিম সময়ে এসে এসব সংকটের সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে।

তাবিথ আউয়াল বলেন, ডেঙ্গু যখন মহামারীর রূপ নেয়; তখন আমরা এ সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষকে রুখে দাঁড়াতে দেখেছি।

তার মতে, ঢাকা শহরের নিয়মিত সমস্যাগুলো মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে– বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ ও পানিদূষণ। আমরা সবসময়ই শুনে আসছি– বিশ্বে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান অন্যতম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন– বায়ুতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান পিএম ২.৫ ছাড়ালেই সেই বায়ু দূষিত। আর ঢাকার বাতাস সেই মাত্রা ছাড়িয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু বায়ুদূষণের শহর হিসেবে যখন আমরা এক নম্বর স্থান পেলাম, তখন আমাদের টনক নড়ল। তখনই বায়ুদূষণের মোকাবেলায় নামলাম আমরা।

নিরাপদ ঢাকা তৈরির বিষয়ে তাবিথ বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ঢাকা শহরের অপরাধের মাত্রা না কমে আরও বেড়েছে। অপরাধগুলো নানা সময় নানা নামে আতঙ্ক ছড়াত। একসময় বাসে, যাত্রাপথে মলম পার্টির দৌরাত্ম্য সর্বস্ব হারিয়েছেন অনেকে। এর পর সেটি পরিবর্তিত হয়ে আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করে অজ্ঞান পার্টিতে। এখন তো ধর্ষণ পার্টি দেখছি।

এ সময় গত ৫ জানুয়ারি কুর্মিটোলায় ঢাবিছাত্রী ধর্ষণের ঘটনার কথা উল্লেখ করে ভুক্তভোগীর প্রতি সমবেদনা জানান তিনি।

নিরাপত্তা বিষয়ে ইতিমধ্যে অনেক প্রশংসনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানিয়ে তাবিথ বলেন, এ ক্ষেত্রে আরও বেশ কিছু উদ্যোগ নিতে হবে বলে মনে করি। সব বিভাগকে একত্রিত হয়ে অপরাধমুক্ত ঢাকা তৈরি করতে হবে।

তাবিথ বলেন, এখন পর্যন্ত সাতবার ঢাকা এরিয়া প্ল্যান পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখেছি– যতবারই পরিকল্পনার পরিবর্তন আনা হয়েছে, ততবারই জনসাধারণের জন্য নির্মিত পার্ক, সুবজ ভূমি কমে গেছে। আমার মনে হয় ঢাকা শহরে জনগণের জন্য উন্মুক্ত স্থানের পরিমাণ ১ শতাংশের নিচে চলে এসেছে। তাই ঢাকাকে বসতযোগ্য করে গড়ে তুলতে হলে এবং জনগণের কল্যাণে পার্ক, খেলার মাঠ বেশি করে গড়তে হবে এবং পাশাপাশি এসব স্থানের মান বজায় রাখতে হবে।

কিন্ত ঢাকার উন্নয়নে কাজ করতে গেলে বিশেষ একটি কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করেন তাবিথ আউয়াল।

তিনি বলেন, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের পরিকল্পনা ম্যাপের সঙ্গে রাজউক, ওয়াসা ও পুলিশ প্রশাসনের ম্যাপের কোনো মিল নেই। সিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ম্যাপ ৫টি জোনে ভাগ করা। কিন্তু আমাদের কাজ করতে হয় ৫৪টি ওয়ার্ডের ভিত্তিতে। এদিকে পুলিশ কর্মকর্তার কাছে গেলে দেখবেন তারা থানাভিত্তিক ম্যাপ নিয়ে কাজ করছেন। এখানে একটি সমন্বয়হীনতা দেখা যাচ্ছে, যা পরিকল্পনা নিতে আর উন্নয়ন কার্যে বাধাগ্রস্ত করছে। অর্থাৎ আমরা নিজেরাই সমস্যা সৃষ্টি করে রেখেছি। আমি চাই, এ বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট ছক ও পরিকল্পনায় আসতে হবে এবং সমন্বয় করে একটি নির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করে এগোতে হবে।

তিনি যোগ করেন, ঢাকার নাগরিকরা অনেক ক্ষেত্রে সম্মান পাচ্ছে না। অনেকেই চিকিৎসাসেবা ও অন্যান্য পরিষেবা নিতে গিয়ে হয়রানি হচ্ছেন এবং দুর্ভোগে পড়ছেন। নাগরিকরা অসম্মানিত হচ্ছেন। আমরা চাই– ঢাকার নাগরিকরা সম্মান নিয়ে বসবাস করবেন। সে লক্ষ্যে কাজ করে যেতে হবে আমাদের।

সবশেষে দায়িত্ব না এড়িয়ে সপ্রণোদিত হয়ে উদ্যোগ নিয়ে ঢাকা শহরের উন্নয়নে নিজেকে নিয়োগ করতে হবে বলে জানান ঢাকা উত্তরে বিএনপি মনোনীত এই প্রার্থী।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply