করোনাভাইরাস বিশ্বের সাথে সাথে বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। দেশে বর্তমানে ৩৯ জন করোনা আক্রান্তের শনাক্ত করা হয়েছে। এই করোনা প্রতিরোধে সরকার অফিস-আদালত স্কুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে। বন্ধ করেছে গণপরিবহন। তবুও ছড়িয়ে পরছে এই করোনাভাইরাস। এই ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে খোলা চিঠি লিখেছেন
সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি এ্যাড. তারানা হালিম। তিনি তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে গত সোমবার এক পোস্টের মাধ্যেমে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে এই খোলা চিঠি লিখেন। পাঠকের জন্য তা তুলে ধরা হলো।
আমার মত এক সাধারণ নাগরিকের
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সমীপে খোলা ঠিঠি একটু গুরুত্ব পাবে কি?
জনাব,
চীনে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিশ্চিত হবার পর আমরা (বাংলাদেশ) প্রস্তুতির জন্য আড়াই মাস সময় পেয়েছি। একথা স্বীকার করতেই হবে। সে সময়টুকু এই ভাইরাস প্রতিরোধে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের “Best practise” গ্রহণ, পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়া, পৃথিবীর খারাপ ও ভুল দৃষ্টান্ত থেকে শিক্ষা নেয়া দরকার ছিল।
জানি, অনেকে বলবেন এখন মন্ত্রী নেই তো তাই পরামর্শ দেয়। যারা এটি বলবেন তাদের উত্তরটাও আগে দিয়ে দেই- “যখন পরীক্ষা ছাড়া সুপারিশে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া হত তখন সরকার দলীয় এম,পি হয়েও বলেছিলাম এমনটি করা হলে আমরণ অনশন করবো। পরে সেভাবে লাইসেন্স দেয়া বন্ধ হয়েছিল। যখন সীম (মোবাইল) এর বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন শুরু করলাম তখন সকলে ট্রল করলো আমাকে তখনও কিন্তু প্রতিমন্ত্রী’ই ছিলাম, একটি বিশেষ টিম কে সাথে নিয়ে কাজটি সম্পন্ন করেছি। মন্ত্রী বা এম.পি থাকা বা না থাকা সত্য বলা থেকে আমাকে বিরত করতে পারেনি অতীতেও। তাই, কিছু অযাচিত পরামর্শ দেই (জানি, কেউ কার্যকর করার প্রয়োজন মনে করবে না)। তবু একটি জীবনও মূল্যবান- এটি মনে রাখা দরকার। এও মনে রাখতে হবে এই ভাইরাস আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পাটি দেখবে না, মন্ত্রী- এমপি কিছুই দেখবে না। এখানে সকলে সমান বিপদগ্রস্ত। কিছু কথা লিখি।
• দ্রুত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন দেশি, বিদেশি বিশেষজ্ঞ সমন্বয় তদারকি ব্যবস্থা গ্রহণ ও পর্যবেক্ষণ কমিটি করা প্রয়োজন।
• সম্পূর্ণ লক ডাউন করতে হলে, করতে হবে। কারফিউ দিয়ে সব মল, রেল স্টেশন, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, লঞ্চ ঘাট জীবানুনাশক স্প্রে দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে, অধিক আক্রান্ত দেশ থেকে আগমন সম্পূর্ণ বন্ধ শুরু থেকেই করা দরকার ছিল। সেক্ষেত্রে সেখানে এদেশের নাগরিকদের প্রতিমাসে সরকারি খরচে থাকা-খাওয়ার জন্য ঐ দেশেই অর্থ প্রেরণ করা যেত। এদেশে বিদেশ ফেরৎ- দের মাধ্যমে সংক্রমণ হার বেশী। থার্মাল স্ক্যানারে কেবল জ্বর ধরা পড়ে “করোনা ভাইরাস” নয়। তাই জীবাণু বহনকারীরা বড় নিশ্চিন্ত মেনে সেলফ কোয়ারেন্টাইনে না থেকে, ঘুরে বেড়িয়েছেন সংক্রমণ ছড়িয়েছেন।
• ডাক্তার, নার্স, সেনা-সদস্য, ট্রাফিক পুলিশ, হাসপাতালে কর্মরত সুরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত সবার জন্য সুরক্ষা পোশাক দরকার, এক্ষেত্রে অন্য দেশের সাহায্য নেয়া অত্যাবশক, সংক্রমণ পরীক্ষার জন্য একেবারে আলাদা সুরক্ষিত স্থানে, বেশী বেশী রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার। এক্ষেত্রে পরীক্ষা সরজ্ঞাম যত দ্রুত সম্ভব আনা দরকার, পৃথক বেশী সংখ্যক হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার দরকার।
• আমরা এখনই ভাববো-শপিং মল, বস্তি এলাকা, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মত ঘনবসতি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ন্ত্রণের প্রস্তুতি কি হবে?
• এই সংক্রমণ ইটালীতে এখন, ভিন্ন দিকে মোড় নিচ্ছে- প্রায় সবাই এখন নিউমোনিয়ার উপসর্গ নিয়ে আসছে। তাই মৃতের সংখ্যা বাড়ছে সেখানে(ইতালি)। আমাদের তেমন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সরঞ্জাম আনা দরকার, চীন ও South Korea নিয়ন্ত্রনে সফলতা দেখাচ্ছে। তাদের অনুসরণ করা দরকার।
• জনগণকে সেলফ কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম মেনে চলতে হবে। ঘরে বসে নামাজ পড়া, জমায়েত না করলে- মানুষের জীবন বাঁচাবার এই চেষ্টাকে আল্লাহ’ই পুরস্কৃত করবেন।
• জনপ্রতিনিধি বা অনেক ব্যক্তিকেই টিভি-তে দেখলাম “করোনা ভাইরাস” প্রতিরোধের জন্য বড় সমাবেশ করে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করতে? ধারণা আছে আমাদের এতে প্রতিরোধ হচ্ছে? না-ছড়াবার ব্যবস্থা হচ্ছে? এত প্রচারপ্রিয় কেন আমরা? দেবার ইচ্ছে থাকলে নিভৃতে নতুন জীবানুমুক্ত প্যাকেটে বাড়ি বাড়ি পাঠান।
• আরেকটি বিষয় মার্কেটে স্যানিটাইজার নেই, চাল,ডাল, পেয়াজ সহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্য উর্ধ্বমুখী। হে কালোবাজারীগণ ‘করোনা’ কি আপনাদেরকে ছাড় দেবার ঘোষণা দিয়েছে? টাকা নিয়ে কবরে যাবেন? থামুন। মজুদ করবেন না। আল্লাহ’কে ভয় পান।
• এবার আমাদের কথা, বলি। আপনি ১০টি মাস্ক, ১৫টি হ্যান্ড স্যানিটাইজার না কিনে,কিছু কম কিনলে আরো কয়েকটি পরিবার তা কিনতে পারবে। আপনি চাল, ডাল কিছু কম কিনলে আরেকটি পরিবার তা কিনতে পারবে। নিজের বাড়তিটুকু অন্যের জন্য কিন্তু অপরিহার্য।
• বিঃ দ্রঃ- আমার বাসায় কয়েক মন চাল কিনি নাই। মোট ১০ কেজি
(নাজির শাইল)চাল আছে, ডাল আছে- ২ কেজি, ডিম- ০১ ডজন সয়াবিন তেল-৪ লিটার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ২টি- কেন জানেন? সবাইকে নিয়ে বাঁচতে চাই, একা নয়।
কোন দেশে কত পারমানবিক শক্তি আর অস্ত্র আছে। সেই প্রতিযোগিতায় মহামারি বা মারাত্মক রোগ প্রতিরোধে গবেষণা জোরে সুরে হয়নি। তাই পারমাণবিক এর কাছে এই মারাত্মক মানবিক বির্পজয়…..।
আসুন কাউকে দোষারোপ নয়,আল্লাহ সুস্থ রাখুন সবাইকে-এটাই কাম্য, তাই আজকের লেখা।
এ্যাড. তারানা হালিম
সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ও সভাপতি,
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট।
Leave a reply