করোনাভাইরাসের ধাক্কা লেগেছে দেশের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পেও। মানুষের চলাচল স্তিমিত হওয়ায় আগের তুলনায় কমেছে পণ্য বিক্রি। ফলে বেড়েছে পণ্যের মজুদ। ইতোমধ্যেবিপণি বিতানগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। ২৫ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে নিত্যপণ্য ছাড়া অন্যান্য পণ্যের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ থাকবে। সেইসঙ্গে এ খাতে কমেছে ঋণ প্রবাহও। সব মিলিয়ে বড় ধরনের সংকটের মুখে দেশের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প।
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ইতোমধ্যে ঢাকায় জনজীবনে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। অনেক মানুষ ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন। জনবহুল স্থানগুলোতে এখন বিরাজ করছে জনশূন্যতা। ফলে ফুটপাতের হকার বলতে গেলে নেই। আর যারা আছেন, তাদের বিক্রি নেই। এছাড়া কক্সবাজারসহ বিভিন্ন পর্যটন স্থানে পর্যটকদের আগমন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মানুষের চলাচল কমে যাওয়ায় ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে এমন পরিস্থিতির।
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শুধু ঢাকায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আছেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ। তারা নিয়মিত দোকানপাট খুলতে পারছেন না। এছাড়া ভাসমান ব্যবসায়ীরা আগেই ব্যবসা গুটিয়ে সরে পড়েছেন। সব মিলিয়ে পুরো ঢাকা যেন থমকে গেছে। এক ধরনের স্থবিরতার আওতায় মানুষের জীবনের চলাফেরা এবং খাওয়া-দাওয়া।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, মানুষের জীবনের গ্যারান্টি নেই। ব্যবসা তো বহু পরে। দোকান বন্ধ চেয়ে সারাদেশ থেকে শতাধিক টেলিফোন এসেছে। তারা সবাই দোকান বন্ধ করে দিতে চায়। বর্তমানে দোকান খোলা রাখলেও কোনো ক্রেতা মিলছে না। শুধু ওষুধ আর ভোগ্যপণ্য ছাড়া অন্য কোনো দোকানে যাচ্ছেন না ক্রেতারা। ক্রেতা আসা কমে গেলেও উল্টো সেখানে ফ্যান, লাইনসহ অন্যান্য ইউটিলিটি সার্ভিস সচল রয়েছে। তাই সমিতি নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে দোকান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত কয়েক মাস ধরেই ক্ষুদ্র ব্যবসায় মন্দা চলছে। ঋণ প্রবাহ কমে গেছে। করোনার ধাক্কায় তারা একেবারে ধরাশায়ী হয়ে পড়েছেন। জানুয়ারিতে কৃষি ও গ্রামীণ অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্পে ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল ২ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারিতে বিতরণ করা হয়েছে ১ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। ওই ১ মাসের ব্যবধানে এসব খাতে ঋণ বিতরণ কমেছে ৩১৫ কোটি টাকা। একই সময়ে ঋণ আদায়ও কমেছে। জানুয়ারি এ খাত থেকে ঋণ আদায় হয়েছিল ২ হাজার ২৮ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারিতে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। এক মাসের ব্যবধানে ঋণ বিতরণ কমেছে ৪৮ কোটি টাকা। একই অবস্থা এসএমই খাতে। এ খাতে এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল ৪৩ হাজার কোটি টাকা। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বিতরণ করা হয়েছে ৩৯ হাজার কোটি টাকা। ওই সময়ে এ খাতে ঋণ বিতরণ কমেছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল হালিম চৌধুরী বলেন, শুধু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নয়, বড়দের চোখে-মুখে আরও বেশি ভয়। ব্যাংকাররাও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে উঠেছেন। এর শেষ কী হবে, কেউ জানে না। যেসব ঋণ দেয়া হয়েছে সেগুলো কীভাবে আদায় হবে তাও জানা নেই। করোনার ভয়ে মানুষের চলাচল কমে যাওয়ায় সব খাতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর ফলে আক্রান্ত হয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
উত্তরার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবদুল হাই বাহার জানান, করোনার ভয়ে প্রায় ১৫ দিন ধরে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলেছি। কোনো বেচাবিক্রি নেই। কী হবে কিছুই জানি না। ব্যাংকে অনেক ঋণ আছে। এ ঋণ পরিশোধের কোনো পথ জানা নেই।
Leave a reply