প্যাঙ্গোলিন নামের এই প্রাণীর কারণেই মহামারি হয়ে উঠেছে করোনা?

|

চোরাই পথে চীনে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা প্যাঙ্গোলিন নামের একটি প্রাণীর কারণেই মহামারি আকার ধারণ করেছে করোনাভাইরাস! অন্তত, এমনটিই ভাবছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, এই স্তন্যপায়ী প্রাণীটির দেহে এমন একটি ভাইরাস পাওয়া গেছে যা কোভিড নাইনটিনের সাথে ‘ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।’

প্যাঙ্গোলিন হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি চোরাই পথে পাচার হওয়া স্তন্যপায়ী প্রাণী। এটি খাদ্য হিসেবে যেমন ব্যবহৃত হয়, তেমনি ব্যবহৃত হয় নানা প্রাচীন ওষুধ তৈরির জন্য। ঐতিহ্যবাহী চীনা ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে প্যাঙ্গোলিনের গায়ের আঁশের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এছাড়াও প্যাঙ্গোলিনের মাংসও চীনে একটি জনপ্রিয় খাবার।

হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. টমি ল্যাম বিবিসিকে বলেছেন, চীনে পাচার হওয়া প্যাঙ্গোলিনের মধ্যে এমন দুই ধরনের করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে- যা মানুষের মধ্যে দেখা দেয়া মহামারির সাথে সম্পর্কিত।

নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব প্রাণী নিয়ে নাড়াচাড়া করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক হওয়া প্রয়োজন, এবং ভবিষ্যতে করোনাভাইরাসের মতো কোনো মারাত্মক রোগ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কমাতে হলে বুনো প্রাণীর বাজারে প্যাঙ্গোলিনের মতো প্রাণী বিক্রি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত।

তারা এটাও বলছেন যে , মানুষের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির ক্ষেত্রে প্যাঙ্গোলিনের ভুমিকা বুঝতে হলে আরো পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা প্রয়োজন।

তারা বলছেন, এটা সত্যি যে করোনাভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে প্যাঙ্গোলিনের ভূমিকা নিশ্চিত হতে আরও গবেষণার দরকার আছে, তবে ভবিষ্যতে যদি এরকম প্রাণী থেকে মানুষে মহামারি ছড়ানো ঠেকাতে হয় তাহলে বাজারে এসব প্রাণীর বিক্রি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত।

এর আগে, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে বাদুড়কে দায়ী করা হলেও এখন বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাদুড়ের যে করোনাভাইরাস আছে, এবং তার সাথে মানুষের দেহে সংক্রমিত ভাইরাসের মিল থাকলেও ভাইরাসের একটি অংশ যা মানুষের দেহের কোষ ভেদ করে ভেতরে ঢুকতে ভাইরাসটিকে সহায়তা করে- তার সাথে এর মিল নেই।

সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এডওয়ার্ড হোমস বলেন, এর অর্থ হলো বন্যপ্রাণীদের মধ্যে এমন ভাইরাস আছে যা মানুষকে সংক্রমিত করার ক্ষেত্রে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে।

তার মতে বলছেন, করোনাভাইরাসের সাথে বাদুড়ের নিশ্চয়ই সম্পর্ক আছে এবং প্যাঙ্গোলিনও সম্পর্কিত, তবে অন্য কোন প্রাণীর জড়িত থাকারও সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।

ঠিক কীভাবে ভাইরাসটি একটি জন্তুর দেহ থেকে বেরিয়ে অন্য একটি প্রাণীর দেহে এবং তারপর সেখান থেকে মানুষের দেহে ঢুকলো- তা এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে রহস্য হয়েই রয়েছে। তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা,বাদুড় এবং প্যাঙ্গোলিন- দুধরণের প্রাণীই এতে জড়িত কিন্তু এর ঘটনাক্রম এখনো অজানা।

ডা. ল্যাম বলছেন, চোরাই পথে আসা মালয়ান প্যাঙ্গোলিনে করোনাভাইরাস পাওয়া যাবার পর এই প্রশ্নটাও উঠছে যে- এই প্যাঙ্গোলিনের দেহেই বা ভাইরাস ঢুকলো কীভাবে? সেটা কি পাচারের সময় আশপাশে থাকা বাদুড় থেকে এসেছিল – নাকি দক্ষিণ পূর্ব-এশিয়ায় তাদের যে প্রাকৃতিক আবাসস্থল সেখানেই ঘটেছিল?

প্রাণী সংরক্ষণবিদরা বলছেন, এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত অবৈধ বন্যপ্রাণী পাচার রোধের জন্য সরকারগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করা। চীন অবশ্য কোভিড নাইনটিন সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর বন্যপ্রাণীর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছে, এবং ভিয়েতনামেও এমন কিছু পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply