টুম্পা হাসান:
আপনি যতই পরিকল্পনা করে চলুন না কেন, জীবন একেক সময় বড়ই অনিশ্চিত হয়ে ওঠে। ঠিক সেই পরিস্থিতিতে আজ আমরা এসে দাঁড়িয়েছি। সারা দুনিয়া ঘরবন্দি, প্রায় সবার দুয়ারে এসে অপেক্ষা করছে এক অদৃশ্য ভাইরাস। কোথায় পালালে নিস্তার মিলবে তা জানা নেই কারো, কতদিন চলবে তাও অজানা। এই পরিস্থিতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সবার মাঝে বাড়ছে মানসিক চাপ ও উৎকণ্ঠা।
এ পরিস্থিতিতে দিশেহারা হওয়াটা বিচিত্র কিছু নয়। স্রেফ সময়ের অভাবে আমরা কত কিছু করে উঠতে পারি নাই জীবনে। এখন সময় এসেছে সেই অপূর্ণ ইচ্ছাগুলো পূরণ করার। যারা এখন ছুটিতে আছেন তাদের অফুরন্ত অবসর আর যারা ঘরে থেকে কাজ (work-from-home) করছেন তাদের যাতায়াতের সময় বেঁচে যাচ্ছে। এখন তো নতুন কিছু শেখার বা জানার আদর্শ সময়। আসুন মেনে চলি কিছু সহজ নিয়ম তাহলে ঘরবন্দি থাকা দিনগুলো আরো বেশি সহনীয় হয়ে উঠবে।
১. নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন-পরিপাটি রাখুন, বাইরে বের হচ্ছেন না বলেই কি এলোমেলো থাকবেন? অবশ্যই না; ত্বকের যত্ন নিন, নিয়মিত শ্যাম্পু করুন। নিজেকে ভালবাসুন।
২. স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস গড়ে তুলুন, যেন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। জাঙ্ক ফুড জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। শাক সবজি, ডাল, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, আর অন্তত একটি করে ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৩. বারবার হাত স্যানিটাইজার করা দরকার কিন্তু বাড়াবাড়ি করবেন না। বাথরুমে গেলে, বাইরে থেকে ঘরে ঢুকলে, খাওয়ার পরে, হাঁচি কাঁশি দিলে, ঘরের কাজ করলে, বাইরে থেকে কেউ দেখা করতে এলে ভালোভাবে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন। অকারণে বারবার হাত দেওয়া দরকার নেই।
৪. ওজনের দিকে খেয়াল রাখুন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে উঠে ঘরের মধ্যে হেঁটে বেড়ান, ছাদে বা বারান্দায় হাঁটার সুযোগ থাকলে তো কথাই নেই। ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করুন। স্থির দৌঁড়েও (Spot jogging) ফিটনেস বজায় থাকবে ।
৫. স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণের রাখুন, জীবনে কিছু কিছু বিষয় আপনি কখনো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। সেটা মেনে নিন এবং ভালো থাকার চেষ্টা করুন। পৃথিবীর কোথায় কত মানুষের মৃত্যু হলো তা নিয়ে না ভেবে প্রোডাক্টিভ বিষয়ে নজর দিন। নামাজ পড়ুন, পছন্দের বই পড়ুন বা গান শুনুন। চাইলে মুভি লিস্ট বানিয়ে দেখা শুরু করুন। সব কাজেই নিজের সেরাটা উজাড় করে দিন।
৬. পর্যাপ্ত ঘুমের অভ্যাস করুন, অন্তত ৮ ঘণ্টা। রাত জেগে থাকার অভ্যাস বন্ধ করুন। ঘুমের অভাবেও কিন্তু ওজন বৃদ্ধি পায়।
৭. নিয়ম করে পানি খান, প্রতিদিন দেড় ঘণ্টা পরপর পানি খান। খাওয়ার এক ঘণ্টা পরে পানি খাবেন।
৮. গৃহবন্দী থাকতে গিয়ে শরীরে যেন ভিটামিন ডি এর ঘাটতি তৈরি না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখুন । ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হলে হাড় ক্ষয় হয়। ডিপ্রেশন বাড়ে। তার চেয়েও বড় কথা ইমিউনিটি (Immunity) কমে যায়- যার ফলে ঠাণ্ডা লাগা, সর্দি-কাশিতে ভোগার যন্ত্রণা শুরু হয়। সূর্যালোকের উপস্থিতিতে শরীর কোলেস্টের থেকে ভিটামিন ডি তৈরি করে নেয়। এছাড়া কিছু খাবার থেকেও আমরা ভিটামিন ডি পেতে পারি (ডিম, দুধ, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি) ।
শেষ করতে চাই রুমির একটি উক্তি দিয়ে- “গতকাল আমি চতুর ছিলাম। তাই আমি পৃথিবীটাকে বদলে দিতে চেয়েছিলাম। আজ আমি জ্ঞানী। তাই নিজেকে বদলে ফেলতে চাই।” নিজেকে বদলে দেখুন পরিস্থিতি আপনার মুঠোয় থাকবে। ভালো থাকুন, ভালোভাবে বাঁচুন ।
লেখক: সংবাদ উপস্থাপক ও পুষ্টিবিদ।
Leave a reply