স্টাফ রিপোর্টার, মাদারীপুর:
করোনাভাইরাসের কারণে আইইডিসিআর কর্তৃক ক্লাস্টার ঘোষিত অধিক ঝুঁকিপূর্ণ দেশের প্রথম লকডাউন এলাকা মাদারীপুরের শিবচরে অচলাবস্থার ২৪ দিনেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারি বা স্বাস্থ্য বিভাগের কোন অর্থ বরাদ্দই আসেনি।
জানা জায়, এ সংক্রান্ত কার্যক্রম চলছে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে। বিশেষ পরিস্থিতিতে হাসপাতালের অচল এ্যাম্বুলেন্সটিও স্থানীয় সংসদ সদস্য চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী সারিয়ে দিয়েছেন ও আরেকটি দিয়েছে পৌরসভা। মা ও শিশু কেন্দ্রে ২০ শয্যার একটি পৃথক আইসোলেশন কেন্দ্র ঘোষণার পর ১২ জন চিকিৎসকসহ ৭৬ জন জনবল চাহিদাপত্র দিয়ে কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি পাঠালেও এখনো কোন সাড়া মেলেনি।
বিশেষায়িত কেন্দ্রটির রোগীদের খাবার ব্যবস্থাই করতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এদিকে অর্থ বরাদ্দ না থাকায় সদর হাসাপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তি শিবচরের ১২ রোগীসহ ১৫ রোগী মানহীন খাবার খাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, দেশের প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় পর গত ১৯ মার্চ জেলার শিবচর উপজেলাকে প্রথম কনটেইনমেন্ট পরে লকডাউন ঘোষণা করে জনগনের চলাচল সীমিত করা হয়। এ পর্যন্ত মাদারীপুর জেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৯ জন। এর মধ্যে শিবচর উপজেলায় ১৫ জন। এ উপজেলায় এক ইতালি প্রবাসীর বাবা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ছাড়পত্র নিয়ে এই পরিবারের ৮ জন সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরলেও ৫ জন আবারও সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি হয়েছে।
বর্তমানে শিবচরের ১২ জনসহ ১৫ জন সদর ও বিভিন্ন হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি রয়েছে। সংক্রমিত বেশি হওয়ায় শিবচরকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ক্লাস্টার ঘোষণা করে আইইডিসিআর। আইইডিসিআরের একটি টিম শিবচরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়ে নমুনা সংগ্রহ করছেন। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় শিবচরের দক্ষিন বহেরাতলা হাজী আবুল কাশেম উকিল মা শিশু কল্যান কেন্দ্রকে ২০ শয্যার আইসোলেশন কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়।
জেলা প্রশাসকসহ সিভিল সার্জন কেন্দ্রটি পরিদর্শনও করেন। আইসোলেশন কেন্দ্রটির জন্য ১ জন মেডিসিন কনসালটেন্ট, ১০ জন চিকিৎসক, ১ জন আরএমও, ২ জন নার্সিং সুপারভাইজার, ২০ জন সিনিয়র স্টাফ নার্সসহ ৭৬ জন কর্মচারী চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। তবে এখনো কোন সদুত্তর আসেনি। শিবচর হাসপাতালের কার্ডিওলোজিস্ট ডাঃ হারুনুর রশীদ খানকে ব্যবস্থাপক করে ২ জন চিকিৎসকসহ ২০ জন নার্স ও স্টাফ সংযুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে কেন্দ্রটিতে।
আইইডিসিআরের নির্দেশনা অনুযায়ী করোনা আইসোলেশনে স্বাস্থ্যকর্মীদের এক সপ্তাহ দায়িত্ব পালনের পর ১৫ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার বিধান রয়েছে। ফলে কয়েক সপ্তাহ গেলেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবাই ভেঙ্গে পড়ার শংকা রয়েছে। সরকারি বরাদ্দ না থাকায় কেন্দ্রটির রোগীদের খাবারের জন্য চিকিৎসকরা ধর্না দিচ্ছেন নেতৃবৃন্দের কাছে।
অথচ শিবচর হাসপাতালের ২৭ চিকিৎসকের মধ্যে ৪ জন মাতৃত্বকালীন ও প্রেষনে অনুপস্থিত রয়েছেন। ডক্টর কোয়ার্টার লকডাউন থাকায় ৪ চিকিৎসক হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। প্যাথলোজিস্ট ও সহকারী প্যাথলোজিস্টও কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। নার্স রয়েছেন ২৩ জন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সচল এ্যাম্বুলেন্সটি করোনা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত করা হয়েছে।
স্বপরিবারে সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে থাকা এক ইতালি প্রবাসী মুঠোফোনে বলেন, আইসোলেশনে আমাদের নেয়া হয় সুস্থতার জন্য। করোনা রোগীদের ভালো মানের খাবার খেতে দিতে হয়। কিন্তু এ ওয়ার্ডে যা খাবার দেয় তা খেয়ে আরও অসুস্থ হয়ে যেতে হয়।
শিবচরের প্রস্তাবিত আইসোলেশন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক ডাঃ হারুনুর রশীদ খান বলেন, করোনা আইসোলেশনে যারা দায়িত্ব পালন করবেন তারা এক সপ্তাহ ডিউটি করার পর নিয়ম অনুসারে ১৫ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কর্মকর্তা ডাঃ শশাঙ্ক চন্দ্র ঘোষ বলেন, এখন পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতির পর কোন অর্থই বরাদ্দ আসেনি। এ বাবদ এ পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকা আমার ব্যক্তিগত খরচ হয়েছে। সরকারিভাবে কিছু পিপিই, মাস্ক ও মেডিকেল ইকুইপমেন্ট এসেছে। স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য পিপিই বরাদ্দ ও একটি বিকল এ্যাম্বুলেন্স চীফ হুইপ স্যার সেরে দিয়েছেন। আমি আইসোলেশন কেন্দ্রের জন্য কর্তৃপক্ষ বরাবর জনবলসহ যাবতীয় সামগ্রী চেয়ে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু এখনো কিছু আসেনি। তাই বাধ্য হয়েই স্থানীয় স্টাফদের সংযুক্ত করছি। আর ওই কেন্দ্রের খাবার ব্যাপারে এখনো কর্তৃপক্ষ কিছু জানায়নি। নেতৃবৃন্দদের সহায়তা চেয়েছি।
মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডাঃ শফিকুল ইসলাম বিস্ময়ের সাথে বলেন, বরাদ্দের ব্যাপারে এই প্রথম আপনিই আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কোন অর্থই বরাদ্দ পাইনি এখনো। আইসোলেশনের রোগীদের জন্য জেলা প্রশাসক ভিটামিন সি যুক্ত খাবার বাবদ ৩০ হাজার টাকা দিয়েছেন। ব্যক্তি উদ্যোগে আইসোলেশনে থাকাদের খাবার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
Leave a reply