লকডাউনের কারণে অর্থ সংকটে পড়েছে পরিবার। দুই দিন চুলা জ্বলছে না ঘরে। না খেয়ে আছে গোটা পরিবার।
এদিকে আঠার মাসের শিশুর খাবারও শেষ। ত্রাণের সন্ধানে হন্যে হয়ে ঘুরেও কোথাও থেকে একটুও সহায়তা মেলেনি।
অবশেষে মাথার চুল বিক্রি করে ১৮০ টাকা আয় করলেন এক মা। সে টাকায় কোলের শিশুর জন্য দুধ কিনলেন তিনি।
দেশের করোনা পরিস্থিতিতে এমন হৃদয় নাড়া দেয়া ঘটনা ঘটল সোমবার দুপুরে ঢাকার অদূরে সাভারের পৌর এলাকার ব্যাংক কলোনী মহল্লায়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে দুই সন্তানের জননী সাথী বেগম বলেন, আমরা বয়স্করা ক্ষুধার জ্বালা সইতে পারি। পরিস্থিতি বুঝে নিজেদের সান্ত্বনা দিতে পারি। কিন্তু আঠার মাসের শিশুকে কিভাবে বুঝ দেব? দুদিন ধরে তার খাবারের কোনো আয়োজন করতে না পেরে দুপুরে এদিক-ওদিক ঘুরতে থাকি। পথে এক হকারের (চুল ক্রেতা) সঙ্গে দেখা হয়। তাকে সব জানালে তিনি চুলের পরিবর্তে ৪০০ টাকা দেবেন বলে প্রস্তাব দেন। পরে মাথার চুল কেটে নিয়ে হাতে ১৮০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে চলে যায় ওই হকার।
ত্রাণ না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে সাথী বেগম বলেন, আমরা এই এলাকায় নতুন। অভাবের কারণে গত চার মাস আগে স্বামী মানিকের সঙ্গে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় আসি। দেড় মাস আগে সাভারের ব্যাংক কলোনী এলাকায় নানু মিয়ার টিনশেড ভাড়া বাড়িতে উঠি। এখানে কোথায় ত্রাণ দেয়া হয় জানি না। তিনি আরও জানান, স্বামী পেশায় দিনমজুর। তিনি নিজেও অন্যের বাসায় কাজ করেন। তবে সাভারে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের কথা শোনা গেলে বাড়িওয়ালা কাজে যেতে নিষেধ করে দিয়েছেন। স্বামীও কোনো কাজ না পেয়ে বাড়িতে বেকার বসে আছেন। গত দুই দিন যাবৎ ঘরের সব খাবারও শেষ। ১৮ মাসের শিশু বাচ্চারও কোনো খাবার নেই।
ওই নারীর প্রতিবেশী ভাড়টিয়া রিকশাচালক সুমন জানান, লকডাউনের কারণে সড়কে কোনো যাত্রী নেই। তাই ভাড়া না পাওয়ায় ওই নারীকে সহযোগিতা করার সামর্থ্যও তার নেই।
সাভার উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি) আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও মানবিক ব্যাপার। আমি খুব দ্রুত ওই পরিবারে মধ্যে ত্রাণ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করছি।
সাভার পৌর মেয়র আব্দুল গনি বলেন, এখানে নিয়মিত ও সুষ্ঠুভাবে হতদরিদ্রদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ চলছে। পৌর এলাকায় বিভিন্ন মহল্লায় ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। বাচ্চার দুধ কিনতে মাথার চুল কেটে বিক্রি করে দিয়েছে এমন ঘটনা জানা নেই আমার।
Leave a reply