২০১৬ সালের ৩১ মে। ৫২টি অস্ত্র ও সাড়ে ৫ হাজার গুলিসহ মোংলায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করে সুন্দরবনের দস্যু মাস্টার বাহিনীর ১০ জন সদস্য। প্রথমবারের মতো কোনো ধরনের গোলাগুলি ও রক্তপাতহীন ঘটনা একটি দস্যুবাহিনীর আত্মসমর্পণ! আর এ আত্মসমর্পণের ঘটনায় মধ্যস্থতা করেছেন একজন সংবাদকর্মী, যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিবেদক মোহসীন-উল হাকিম।
২০১৪ সালের নভেম্বরে মাস্টার বাহিনীর সাথে প্রথম দেখা করেন মোহসীন-উল হাকিম। অল্পদিনের মাঝেই সুন্দরবনের ত্রাস এই দস্যুবাহিনীকে অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে উদ্বুদ্ধ করেন। মোহসীন জানান, শুধুমাত্র আস্থা আর বিশ্বাসের ওপর ভর করে এই বাহিনীটি আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের কোনো ধরনের দায়মুক্তি দেয়া হয়নি। স্বাভাবিক নিয়মেই তাদের বিরুদ্ধে চলা মামলাগুলো এগিয়েছে।
ভয় ও অনাস্থার কারণে মাস্টার বাহিনীর কিছু সদস্য সে সময় আত্মসমর্পণ করেননি। কিন্তু আত্মসমর্পণকারী দস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে দেখে একসময় তারাও উৎসাহিত হয়। মোহসীন-উল হাকিমের আহ্বানে সাড়া দেন অপরাপর দস্যুবাহিনীগুলোও।
অল্পদিনের পরই, ১৪ জুলাই, বাহিনীর প্রধানসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করে মজনু ও ইলিয়াস বাহিনীর ১১জন সদস্য । এসময়, তারা ২৫টি অস্ত্র ও ১০২০ রাউন্ড গুলি জমা দেয়।
এরপর একে একে অস্ত্র ও গেলাবারুদ জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করে জাহাঙ্গীর বাহিনী, নোয়া বাহিনী, খোকাবাবু বাহিনী, সাগর বাহিনী, শান্ত বাহিনী, আলম বাহিনী, ছোট রাজু বাহিনী, আলিফ বাহিনী, কবিরাজ বাহিনী, মজিদ বাহিনী ও মানজু বাহিনীর আরও ১৩১ জন সদস্য।
এখন পর্যন্ত ১৪টি দস্যু বাহিনীর ১৫২ জন সদস্য সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন। জমা দিয়েছেন ২৮৯ টি অস্ত্র ও প্রায় ১৫ হাজার রাউন্ড গুলি।
এভাবে, একজন সাংবাদিকের মধ্যস্থতায় একে একে দস্যুবাহিনীর আত্মসমর্পণে সারাদেশে সাড়া পড়ে যায়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও উঠে আসে একজন সাংবাদিকের এমন সাফল্যের গল্প। Has Bangladesh’s piracy amnesty been a success? নামে সংবাদ প্রচার করে বিবিসি।
অস্ত্র ও গোলবারুদসহ এত বিপুল সংখ্যক দস্যু আত্মসমর্পণ করায় সুন্দরবনের জনপদে নেমে এসেছে স্বস্তি। একসময় জেলে-বাওয়ালীদের জীবিকা কেড়ে নিত যে মানুষগুলো, তারাই যে এখন সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন।
মঙ্গলবার আরও ৩টি দস্যু বাহিনী আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চলেছেন। বাহিনীগুলোর মধ্যে আছে কুখ্যাত বড় ভাই বাহিনী, সুমন বাহিনী ও ভাই-ভাই বাহিনী।
যমুনা অনলাইন: টিএফ
Leave a reply