ভারতের মাহোবা ও ঝাঁসিতে পঙ্গপালের ঝাঁক দেখা যাওয়ার পরে উত্তরপ্রদেশের দশটি জেলাকে সতর্ক করা হয়েছে। একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারের শেয়ার করা একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে যে কৃষকরা তাদের ক্ষেতকে পঙ্গপালের হামলা থেকে রক্ষা করতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন। প্রতিবেশী রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশে ফসলে আক্রমণের পর পঙ্গপালরা সে রাজ্যে প্রবেশ করেছে।
ঝাঁসির পুলিশ অফিসার রাহুল শ্রীবাস্তবের পোস্ট করা প্রায় ৩০ সেকেন্ডের ভিডিও ক্লিপটিতে দেখা যাচ্ছে লাউডস্পিকার লাগানো রয়েছে গাড়িতে। স্থানীয় মানুষ একে ডিজে গাড়ি হিসেবেই জানেন। বিয়েতে বা অন্য আনন্দ উৎসবে ‘ডিজে’ ব্যাপক ব্যবহৃত হয়। আর ক্ষেতের মধ্যে সেই ডিজে বাজিয়েই উচ্চস্বরে চলছে একের পর এক গান। খবর- এনডিটিভি
তিনি হিন্দিতে একটি টুইট করেন যাতে লেখা ছিল, ‘ডিজে (ডিস্ক জকি) কেবল নাচ-গানের জন্য নয় এগুলি পঙ্গপালের বাহিনীকে ভয় দেখাতেও কাজে লাগে। আপনারা থালা বাটিও বাজাতে পারেন বা পঙ্গপালদের ভয় দেখানোর জন্য শব্দ করতে পারেন।’
চলতি মাসের শুরুর দিকে পঙ্গপাল পাকিস্তান থেকে রাজস্থানে প্রবেশ করে এবং তারপরে পশ্চিম ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে দল বেঁধে চলে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা পিটিআইকে বলেছেন, মরুভূমির পঙ্গপাল প্রায়শই দেশে দেখা যায় তবে খুব অল্প পরিমাণে।
বন্যপ্রাণী বিভাগের মহাপরিচালক সৌমিত্র দাশগুপ্ত বলেন, ‘এই আক্রমণটি বিশাল। এটি তিন দশকে প্রথম এমন পরিস্থিতি এবং এখন আমাদের জন্য খুবই খারাপ সময় কারণ আমরা ইতোমধ্যেই করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক।’
উত্তরপ্রদেশ সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে এবং ট্রাক্টরে লাগানো স্প্রেয়ার, পাওয়ার স্প্রেয়ার এবং দমকল বাহিনীকে রাসায়নিক নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।’
মঙ্গলবার কয়েকটি ঝাঁক কারাউলি এবং আশেপাশের অন্যান্য অঞ্চলের দিকে অগ্রসর হয়েছে বলেই রাজস্থানের কৃষি কমিশনার ওম প্রকাশ জানিয়েছিলেন। তার কথায়, জয়পুর ও দাউসা এখন পঙ্গপাল মুক্ত হয়ে গেছে।
রাজস্থানের কারাউলিতে পঙ্গপালের তৎপরতা দেখে উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসি, ললিতপুর, জালৌন এবং আওরাইয়া এবং সেইসঙ্গে হামিরপুর, কনৌজ, ইটাওয়াহ এবং কানপুর দেহাত জেলাগুলিতেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশের কৃষি উপ-পরিচালক কমল কাটিয়ার জানান, রাজস্থানের কোটার একটি দল পঙ্গপাল মোকাবিলায় সহায়তা করছে।
ঝাঁসির জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অন্দ্রা ভামসি জানিয়েছেন, তথ্য শেয়ার হওয়া এই মুহূর্তে খুব গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় কৃষকদের কন্ট্রোলরুমে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
ভামসি বলেন, ‘এটি জরুরি অবস্থা এবং আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এই ঝাঁক ইরান, পাকিস্তান হয়ে রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশের উদ্দেশে ভ্রমণ করেছে। দু’দিন আগে রাসায়নিকের স্প্রে করে বিপুল সংখ্যক পঙ্গপাল মারা হয়েছে।’
ভামসির জেলায় যেখানে ফসলের উপর আক্রমণ হতে পারে এমন ক্ষেতগুলিতে বিশাল সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ।
‘কৃষকদের পঙ্গপাল তাড়াতে এবং মুগ ও শাকসবজির মতো ফসল বাঁচাতে উচ্চস্বরে গান বাজানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে,’ বলেন এই কর্মকর্তা।
পঙ্গপাল প্রাণী বা মানুষকে আক্রমণ করে না, তবে ফসল এবং সবুজ গাছগাছালি ধ্বংস করে দিতে পারে।
Leave a reply