নামে মাত্র অস্থায়ী করোনা ইউনিট খুলেছিল ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অবকাঠামো ছিল দুর্বল, ছিল না আগুন নেভানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও। তাছাড়া ইউনিটের ভেতর ছিল প্রচুর দাহ্য পদার্থ। তাই মুহূর্তেই আগুনে মারা যান ভেতরে থাকা ৫ রোগী। ইউনাইটেড হাসপাতালের আগুন নিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত দল। বিশেষ এই ইউনিটের ১২টি অগ্নি নির্বাপন যন্ত্রের ৯টিই ছিল বিকল। দাউ দাউ করে জ্বলা আগুনের স্থায়িত্ব ছিল আধা ঘণ্টার মতো। তাতেই পুড়ে শেষ ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা ইউনিট।
ভস্মীভূত হওয়া অস্থায়ী স্থাপনাটি দেখলে বোঝা যাবে, অবহেলা আর জোড়াতালি দিয়ে করা হয়েছিল এটি। অথচ করোনা দুর্যোগে সব থেকে বেশি গুরুত্ব পাওয়ার কথা এই ইউনিটের। উপরে ও পাশে টিনের চালা দিয়ে ঘেরা। ভিতরে মাত্র ৫টি বেড। এর ভেতরেই অক্সিজেনের পাত্র ও লিটার লিটার স্যানিটাইজার, যা অতিমাত্রায় দাহ্য পদার্থ। সমস্যা আরো আছে, সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ও ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত দল সকালে গিয়ে ১২টি অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র খুঁজে পায় যার নয়টিই মেয়াদোত্তীর্ণ। ভেতরে থাকা কোনো যন্ত্রের বিস্ফোরণ থেকেই আগুনের সূত্রপাত।
ফায়ার সার্ভিসের ডেপুটি ডিরেক্টর দেবাশিষ বর্ধন বলেন, আসলে এ ধরনের ইউনিটের ব্যাপারে আরও সতর্ক থাকা প্রয়োজন ছিল। উপরে টিন এবং পাশে জিপসাম দিয়ে তৈরি ছিল এটি। পার্টিশন ও সিলিং করা হয়েছে বোর্ড দিয়ে। ইউনিটের ভেতরে এসিসহ একাধিক ইলেকট্রনিক ডিভাইস ছিল। আগুন লাগার পর অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা দিয়ে তারা চেষ্টাও করেছিল। কিন্তু সেগুলো মেয়াদউত্তীর্ণ থাকায় কাজ করেনি।
দুপুরে হাসপাতালটি পরিদর্শনে যান ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম। করোনা ইউনিটের নিরাপত্তায় এতো দুর্বলতা দেখে অবাক হন তিনিও। বলেন, যেটি আমার কাছে সবচেয়ে দুঃখজনক লেগেছে সেটি হলো অগ্নি নির্বাপন যন্ত্রগুলোর মেয়াদ ছিল না। এখানে কোনো ধরনের গাফিলতি থেকে থাকলে সরকারের তরফ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আইসোলেশন ওয়ার্ডে ৫ জন নিহতের ঘটনায় রাতে অপমৃত্যুর মামলা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এক ব্রিফিংয়ে, কোভিড-১৯ রোগীদের অবহেলায় ও অনিরাপদে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ইউনাইটেড হাসপাতালের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট পরিচালক ডা. শাগুফা আনোয়ার বলেন, এটা আইসোলেশন ইউনিট হওয়ায় অক্সিজেন চলে। এখানে আইসিইউ ব্যবস্থা আছে। রোগীরা সবাই ভেন্টিলেটরে ছিলেন। তাদের পক্ষে বের হওয়া সম্ভব ছিলো না। আর মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় আমরা চেষ্টা করেও কিছু করতে পারিনি।
আগুনে নিহত পাঁচজনের মধ্যে তিনজন করোনা পজেটিভ ছিলেন। আর দুইজন ছিলেন নেগেটিভ। স্বজনদের অভিযোগ তাদের অনেকটা জোর করেই আটকে রেখেছিল হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষ। এক রোগীর স্বজনরা সেদিন সকালে তাকে রিলিজ দেয়ার বা আলাদা কেবিনে হস্তান্তরের অনুরোধ করেছিল। রাতে তিনি আইসোলেশন ওয়ার্ডে লাগা আগুনে মারা গেলেন। এর উত্তরে ডা. শাগুফা বলেন, আমাদের কিছু পদ্ধতি মেনে কাজ করতে হয়। আমরা সেগুলো মেনেই রোগীকে ছাড়পত্র দেই।
Leave a reply