দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার চলতি বাংলা সংবাদপত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রাচীন কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় এই প্রথম কোনো নারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নিলেন।
আচমকাই রোববার দুপুরে পত্রিকার সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ অনির্বান চট্টোপাধ্যায়কে সরিয়ে ঈশানী দত্তরায়কে সম্পাদক ঘোষণা করেন।
১৯২২ সালের ১৩ মার্চ পত্রিকা চালুর পর থেকে এই প্রথম কোনো নারীকে সম্পাদকের দায়িত্বে দিয়েছে আনন্দবাজার গোষ্ঠী। দীর্ঘদিন পত্রিকার মালিক ‘সরকার পরিবার’-এর সদস্যরাই পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব সামলেছেন। বছর ১৫ আগে প্রখ্যাত সাংবাদিক সুমন চট্টোপাধ্যায়ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হয়েছিলেন। কিন্তু কখনো কোনো নারী, তাও আবার সরকারের পরিবারের বাইরের এক সাংবাদিককে দায়িত্ব নিয়ে আসা অবশ্যই বাংলা সংবাদজগতে মাইলস্টোন।
সোমবার প্রকাশিত পত্রিকার দ্বিতীয় পাতায় প্রিন্টার্স লাইনে একটি অভিনব লাইন বেরিয়েছে, পিআরবি অ্যাক্ট অনুযায়ী সংবাদ নির্বাচনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ঈশানী দত্ত রায়। এখন পর্যন্ত দেশ-বিদেশের অনেক সংবাদপত্রেই ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক পদ আছে, প্রিন্টার্স লাইনে তা প্রকাশিতও হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত পাঠক বা সংবাদকর্মী কারো চোখে পড়েনি পত্রিকার প্রিন্টার্স লাইনে ‘পিআরবি অ্যাক্ট অনুযায়ী সংবাদ নির্বাচনের ভারপ্রাপ্ত’ লাইনটি।
দিন কয়েক ধরে বিদায়ী পত্রিকা সম্পাদক অনির্বান চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে পুলিশি মামলার জেরে টানাপোড়েন চলছিল। করোনা সংক্রমণে মৃত্যু নিয়ে ভুল তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশের অভিযোগে একটি মামলাও তার বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে। পর পর দু’দিন তাকে কলকাতা পুলিশ হেয়ার স্ট্রিট থানায় ডেকে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ জেরা করে। বসিয়েও রাখা হয়। এমনকী সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র অনির্বানকে গ্রেফতারির ইঙ্গিত দিয়ে শনিবার রাতে টুইট করেন।
সেই টুইটের জেরে কলকাতায় বিভ্রান্তি ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে স্বয়ং অনির্বান জানিয়ে দেন, তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। অবশ্য ঈশানী দায়িত্বে আসার পরে সংবাদজগতে গুঞ্জন ছড়িয়েছে, রাজরোষে পদ গেল অনির্বানের। কিন্তু পত্রিকা গোষ্ঠী যে ভুয়া খবরে মামলা হলে দায়িত্ব থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখতে চাইছেন তার প্রমাণ এদিনের প্রিন্টার্স লাইনে ‘পিআরবি অ্যাক্ট অনুযায়ী সংবাদ নির্বাচনের ভারপ্রাপ্ত’ সম্পাদক শব্দটি ছাপার অক্ষরে প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছেন।
ঈশানী কলকাতার ক্রাইস্ট চার্চ স্কুল, বেথুন কলেজ ও প্রেসিডেন্সিতে পড়াশোনা করেছেন। প্রথমে ১৯৯৬ সালে আনন্দবাজারে যোগ দেন। মাঝে কিছুদিন পড়াশোনার জন্য চাকরিতে ইস্তফা দেন। ফের ২০০৪ সালে যোগ দেন। সেই থেকে টানা নানা দায়িত্ব সামলেছেন। আর এবার তো সটান ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক।
এই আনন্দবাজার গোষ্ঠীর ম্যাগাজিন ‘সানন্দা’য় দীর্ঘদিন সম্পাদকের দায়িত্ব সামলেছেন প্রখ্যাত অভিনেত্রী তথা চিত্রপরিচালক অপর্ণা সেন।
Leave a reply