চট্টগ্রাম ব্যুরো:
স্বজনরা হন্যে হয়ে খুঁজেছিলেন আইসিইউ। কিন্তু রোগীর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে শুনে কোনো হাসপাতালই রাজি হলো না। আইসিইউ খুঁজতে খুঁজতে মারা গেলেন গর্ভবতী এক নারী। এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামে। করোনায় বন্দরনগরীর স্বাস্থ্যখাতের বেহাল দশার বলি হলেন মুক্তা খাতুন নামের ৩০ বছর বয়সী ওই নারী।
জানা গেছে, আর মাত্র ৭ দিন পর ১৮ জুন ছিল মুক্তা খাতুনের ডেলিভারির নির্ধারিত সময়। মঙ্গলবার ভোরে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তার। আইসিইউতে ভর্তি হতে ঘুরলেন এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে। টানা ১৮ ঘণ্টা চেষ্টা করেও চট্টগ্রামের কোনো হাসপাতালে পাননি একটি আইসিইউ বেড। এক পর্যায়ে মধ্যরাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন গর্ভবতী এই নারী। বুধবার দুপুরে ফৌজদারহাটে শ্বশুরবাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে।
স্বজনরা জানান, চট্টগ্রামের কোনো হাসপাতাল বাদ রাখেননি, কোথাও আইসিইউ বেড পাননি। শেষ চেষ্টা হিসেবে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েও কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালান। তাতেও কোনো কাজ হয়নি। সাড়া দেয়নি কেউ।
মুক্তার ভাই সোলাইমান রনি জানান, তার বোনের শ্বাসকষ্ট শুরু হলে প্রথমে আগ্রাবাদের মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যান। শ্বাসকষ্ট দেখে সেখানে ভর্তি করায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অনেক কাকুতি মিনতি করলে এক্সরে করিয়ে আনতে বলেন। তড়িঘড়ি করে এক্সরে করানোর পর রিপোর্ট দেখে চিকিৎসকরা জানান রোগীকে আইসিইউতে রাখতে হবে। কিন্ত তাদের আইসিইউ নেই।
শুধুমাত্র করোনা সন্দেহে তার গর্ভবতী বোনকে কেউ আইসিইউ দেয়নি বলে অভিযোগ করেন রনি।
মা ও শিশু হাসপাতাল থেকে মুক্তাকে নিয়ে পরিবারের সদস্যরা ছুটে যান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গর্ভবতী জানার পরও তাকে ভর্তি করা হয়নি করোনা ওয়ার্ডে। ওয়ার্ড থেকে তাকে আইসিইউতে রেফার করা হলেও কর্তৃপক্ষ সাফ জানান, আইসিইউতে সিট খালি নেই। মুক্তার অবস্থার অবনতি দেখে তার স্বামী, ভাই ও পরিবারের সদস্যরা আইসিইউতে ছুটে যান। অন্ততঃ এক ঘণ্টার জন্য হলেও আইসিইউতে রাখার অনুরোধ জানান। তাতেও কাজ না হওয়ায় স্বজনরা একে একে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, ম্যাক্স হাসপাতাল, পার্কভিউ হাসপাতাল, ন্যাশনাল হাসপাতালসহ সব বেসরকারি হাসপাতালে যোগাযোগ করেন। কোথাও পাননি একটি আইসিইউ বেড।
একপর্যায়ে পরিবারের সদস্যরা সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা ডেলিভারি করিয়ে মুক্তার শ্বাসকষ্ট কমানোর চেষ্টা করার অনুরোধ জানালেও চমেক হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা জানান, শ্বাসকষ্ট কমানো ছাড়া সিজারের সুযোগ নেই। শেষে ভোররাত ৪টার দিকে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মুক্তা। পৃথিবীর আলো দেখতে পারলো না গর্ভের সন্তানও।
রনি জানান, তার বোন মুক্তার দুই ছেলে-মেয়ে। আগেরবার বাচ্চা হওয়ার সময় এরকম শ্বাসকষ্ট হলেও চিকিৎসা পেয়েছিলো। এ ঘটনার বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা কথা বলতে রাজি হননি। কারও কোনো লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আফতাবুল ইসলাম।
Leave a reply