পঞ্জিকার পাতায় বর্ষা শুরু হতে আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। তবে প্রকৃতিতে কিন্তু এরই মধ্যে বর্ষা তার সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হয়ে গেছে। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও বৃষ্টি-বাদল হচ্ছে।
করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিনের সাধারণ ছুটি শেষ করে কাজেও ফিরতে হয়েছে আমাদের। এ সময় হঠাৎ বৃষ্টিতে রাস্তায় জমে থাকা নোংরা পানি হাতে-পায়ে লেগে হাত ও পায়ে ফাংগাল ইনফেকশন, ফুসকুড়ি, চুলকানি, দুর্গন্ধ ও কালো ছোপ ছোপ দাগসহ স্কিনের নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় তাই ত্বকের যত্ন নেয়া জরুরি।
এ সম্পর্কে রেড বিউটি স্যালনের সিইও ও রূপ বিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন জানান, আমরা এখন একটা সংকটময় সময়ে আছি। ঘরে থাকাটাই এখন সবচেয়ে নিরাপদ। তারপরও নানা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে তো যেতেই হচ্ছে। বর্ষায় বাইরে গেলে হুটহাট বৃষ্টিতে কাদাজলে মাখামাখি হয়ে ত্বকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার ঘরে থাকলেও এ ঋতুতে ত্বকের যত্ন নেয়া প্রয়োজন।
এখন যেহেতু রূপচর্চা কেন্দ্রগুলো বন্ধ রয়েছে তাই ঘরেই যে ধরনের রূপচর্চা করা সম্ভব সেগুলো করতে চেষ্টা করুন। রূপচর্চার উপকরণ প্রতিটি বাড়ির রান্নাঘরেই থাকে। সেগুলো দিয়েই ঘরে বসেই ত্বক ও চুলের যত্ন নিন।
লেবু এখন প্রায় সব ঘরেই রয়েছে। লেবুর রসের সঙ্গে টকদই মিশিয়ে নিন। এবার নারকেল তেল গরম করে তুলার সাহায্যে স্কাল্পে ঘষে ঘষে লাগান, যাতে খুশকিগুলো উঠে যায়। চিরুনির সাহায্যেও খুশকি তুলতে পারেন। এবার টকদইয়ের মিশ্রণটি স্কাল্পে ও পুরো চুলে লাগিয়ে নিন। ২০ মিনিট পর ধুয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন। স্কাল্পের শুষ্কতা, রুক্ষতা, খুশকি দূর হয়ে যাবে।
একইভাবে স্কিনের জন্য টমেটো, শসা, কলা, পেঁপে ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। টমেটো ব্লিচ, শসা টোনারের কাজ করে। বিভিন্ন রকম মিষ্টি ফল ত্বক কোমল রাখতে সাহায্য করে। চাইলে এর সঙ্গে সামান্য বেসন, চালের গুঁড়া মিশিয়ে নিতে পারেন।
ত্বকের দৈনন্দিন যত্ন
বৃষ্টির কারণে পায়ে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হয়। তাই এখন প্রতিদিন বাইরে থেকে ঘরে ফিরে খুব ভালো করে হাত-পা পরিষ্কার করতে হবে। এ জন্য ঘরে ফিরে একটি পাত্রে কুসুম গরম পানিতে লবণ, সামান্য ভিনেগার ও শ্যাম্পু দিয়ে তাতে ৫-৭ মিনিট পা ডুবিয়ে রেখে তুলে ফেলুন। হালকা হাতে লুফা দিয়ে পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। ফাঙ্গাল ইনফেকশনমুক্ত রাখতে বর্ষাকালে পা সব সময় পরিষ্কার ও শুকনো রাখতে হবে। গোসল ও অজু করার পর শুকনা কাপড় দিয়ে পা মুছে নিতে হবে। পায়ে মোজা পরলে ব্যবহৃত মোজা প্রতিদিন ধুয়ে দিন এবং জুতা ভিজে গেল ভালোভাবে শুকিয়ে পরুন।
পেডিকিউর-মেনিকিউর করুন
এ সময় সপ্তাহে অন্তত একদিন পেডিকিউর ও মেনিকিউর করুন। পেডিকিউর-মেনিকিউর করতে যে পার্লারেই যেতে হবে এমনটা কিন্তু নয়। আপনি চাইলে ঘরে বসেই খুব সহজেই করে ফেলতে পারেন পেডিকিউর-মেনিকিউর।
ঘরে পেডিকিউর-মেনিকিউর করার পদ্ধতি
একটি ছোট গামলায় গোড়ালি ডোবার মতো পরিমাণে কুসুম গরম পানিতে সামান্য শ্যাম্পু, ৩ টেবিল চামচ লবণ, আধা টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এবার ১৫-২০ মিনিট তাতে পা ডুবিয়ে বসে থাকুন। পা পানি থেকে তুলে ঝামা দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করুন। পায়ের আঙুল ও নখ ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করে নখ ফাইল করে নিন। এবার চিনি ও কয়েক ফোঁটা আমন্ড অয়েল মিশিয়ে দুই পায়ের পাতা স্ক্রাব করুন। গোড়ালি থেকে আঙুল পর্যন্ত বৃত্তাকারে তিন চার মিনিট ম্যাসাজ করুন। এবার কুসুম গরম পানিতে আরও একবার পা ধুয়ে ও মুছে প্যাক লাগিয়ে নিন। প্যাক তুলে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। ঠিক একইভাবে হাতও মেনিকিউর করে নিন।
প্যাক ব্যবহার করুন
বর্ষায় বৃষ্টির কাদা পানিতে হাত ও পা রুক্ষ ও খসখসে হয়ে যায়। পায়ের এ রুক্ষতা দূর করতে সপ্তাহে একদিন হাত ও পায়ে প্যাক ব্যবহার করুন। এ সময় পায়ের ত্বকের জন্য ২ টেবিল চামচ টকদই, ১ টেবিল চামচ চালের গুঁড়া, ১ চা চমচ লেবুর রস, ১ চা চামচ গুঁড়াদুধ ও সামান্য হলুদ বাটা পেস্ট করে পায়ে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। হাতের জন্য আধা কাপ আনারস, আধা কাপ পেঁপে, আধা কাপ মধু একসঙ্গে পেস্ট করে ব্যবহার করুন। ২০ মিনিট পর উষ্ণ গরম পানিতে ধুয়ে নিন। প্যাকটি ব্যবহারে হাতের ত্বক মসৃণ ও সুন্দর থাকবে।
বর্ষা উপযোগী জুতা পরুন
বর্ষায় একদম নিচু স্যান্ডেল পরলে কাদাপানি পায়ে লেগে পা নোংরা ও রোগজীবাণু হতে পারে। এ সময় একটু উঁচু এবং পা ঢাকা থাকে এমন স্যান্ডেল পরুন। বৃষ্টিবাদলার দিনগুলোয় পেনসিল হিল না পরাই ভালো।
স্কাল্পের যত্ন নিন
বর্ষায় হুটহাট বৃষ্টি নামে আবার ভ্যাপসা গরমও পড়ে। মাথার ত্বক কখনও ঘামে ভিজে থাকে তো কখনও বৃষ্টির পানিতে। এর সঙ্গে ধুলাময়লা আটকে স্কাল্পে ফাঙ্গাস সংক্রমিত হয়। যা থেকে চুলে খুশকির সমস্যা দেখা দেয়া। খুশকি মূলত একটা ফাংগাল ইনফেকশন। বর্ষায় খুশকি থেকে চুল ঝরা, চুল নির্জীব হয়ে পড়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। খুশকি হলে দ্রুত তার প্রতিকার করা দরকার। নইলে খুশকি বৃদ্ধিসহ চুলের বিভিন্ন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। এ ছাড়া ফাংগাল ইনফেকশন চুল থেকে শরীরের ত্বকেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। এ সময় চুল খুশকিমুক্ত রাখতে প্রতিদিন শ্যাম্পু না করে একদিন পর পর শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। খুশকি দূর করতে এন্টি ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু এবং উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। খুশকি দূর করতে নারকেল তেলের সঙ্গে কাস্টার অয়েল, ভিটামিন ‘ই’ ক্যাপসুল এবং লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
চুলের যত্ন নিন
বর্ষায় চুল সবসময় শুকনা রাখতে হবে। বৃষ্টির পানি মাথায় লাগলে অবশ্যই চুল ধুয়ে শুকিয়ে ফেলতে হবে। কারণ বৃষ্টির পানি বেশি সময় মাথায় থাকলে মাথার তালু ও চুলের গোড়ায় ফাংগাল ইনফেকশন হতে পারে। চুল পড়া রোধ করতে ২টি পাকা কলা, পরিমাণ মতো টকদই ও কয়েক ফোঁটা অলিভঅয়েল মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করুন।
Leave a reply