মালয়েশিয়ায় ৮ লাখেরও বেশি মানুষ কর্মহীন

|

আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া:

মালয়েশিয়ায় ৮ লাখেরও বেশি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিয়ন্ত্রণ আদেশ মুভমেন্ট কন্ট্রোল অর্ডার (এমসিও) চলাকালীন সময়ে প্রথম ৩ মাসেই দেশটিতে ৮ লাখ ২৬ হাজার ১শ মানুষ বেকার হয়েছেন। এর মধ্যে দেশটির জনসাধারণের পাশাপাশি বিদেশি অভিবাসীরা ও রয়েছেন।

সরকারী পরিসংখ্যান বিভাগ (ডিওএসএম) এ তথ্য প্রকাশ করেছে। তবে এই মন্দা কাটিয়ে উঠতে সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপও নিয়েছে। দেশটিতে কর্মক্ষম জনশক্তি ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সীদের মাঝে জরিপ চালিয়ে এই তথ্য নির্ধারণ করা হয়েছে যা চলতি মাস পর্যন্ত শতকরা ৫.৩ এ পৌঁছেছে।

মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) মালয়েশিয়ার সংবাদ মাধ্যম এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে যখন প্রথম মার্চ মাস থেকে লকডাউন শুরু হয় তখন ৬ লাখ ১০ হাজার ৫শ থেকে শুরু করে এক লাফে ৭ লাখ ৭৮ হাজার ৮শ তে পৌঁছে যায় এবং পরবর্তী এপ্রিল মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত বেকারের সংখ্যা বেড়ে বর্তমানে ৮ লাখ ২৬ হাজার ১শ পূর্ণ হয়েছে।

২০১৯ সালের মে মাসে ৫ লাখ ১৯ হাজার ৮শ জন এবং ২০২০ সালের মে মাসে ৩ লাখ ৬ হাজার ৩শ জন কর্মহীন বেড়ে ৮ লক্ষ ২৬ হাজার ১শ জনে পৌঁছেছে। মালয়েশিয়াতে লকডাউনে শ্রমশক্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সংখ্যা এপ্রিলে ১৪.৯৩ মিলিয়ন থেকে মে মাসে সামান্য কমে ১৪.৮৯ মিলিয়ন
হয়েছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বেসরকারি হিসাবে বেকারের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। প্রথম দফা লকডাউনে সব ধরনের অবকাঠামো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। যদিও পরে ধীরে ধীরে লকডাউন শিথিল করার পর অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে এবং বর্তমান চলমান রিকভারি মুভমেন্ট কন্ট্রোল অর্ডার (আরএমসিও) তে কিছু নিয়ন্ত্রণ আদেশ বহাল রয়েছে। কিছুদিন আগেও দেশটির সরকার অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন সেক্টরে প্রায় ৩৫ বিলিয়নের আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। সরকার আশা প্রকাশ করছেন তারা এই মন্দা কাটিয়ে উঠতে পারবেন।

উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ায় নাগরিক ১৫ বছর থেকে ৬৪ বছর বয়স পর্যন্ত নারী পুরুষ নিয়মিত কাজ করেন। তারা ভারী কোনো কাজ করেন না বিধায় লাখ লাখ বিদেশি শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। এদিকে দেশটির শুধু সেলেঙ্গুর রাজ্যেই প্রায় ৪ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ বিদেশি কর্মী রয়েছেন, যাদের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৪ লাখ ৪৪ হাজার। ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান বিভাগের জরিপে এই বিদেশি শ্রমিক কাজ করছেন বলে এ তথ্য উঠে এসেছে।

রাজ্যের আইনজীবী এবং অবৈধ বিদেশিদের সংখ্যা সম্পর্কে স্থানীয় সরকার, গণপরিবহন ও নতুন গ্রাম উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান এনজি সান হান এই কথা বলেছেন। এনজি বলেছেন, ‘বৈধ ও অবৈধ বিদেশি কর্মীদের সংখ্যার বিষয়ে বিভাগ কখনও কোনো পরিসংখ্যান জারি করেনি তবে সম্ভাবনার নমুনার ভিত্তিতে বিদেশি কর্মীদের উপর একটি বার্ষিক এবং ত্রৈমাসিক অনুমান রয়েছে।

তিনি আরও যোগ করেছেন যে, মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বিদেশি কর্মীদেরসহ এই মাসে রাজ্য পরিসংখ্যান বিভাগ জনসংখ্যা এবং আবাসন শুমারি পরিচালনা করবে। এনজি জানান, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাজ্য সরকার বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ কার্যকর করেছে। এর মধ্যে বিদেশি কর্মীরা যাতে সঠিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে থাকেন তা নিশ্চিত করতে ইমিগ্রেশন বিভাগের সাথে একীভূত অভিযান তীব্র করা হয়েছিল।

রাজ্য সরকার বিদেশিদেরকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ বা লাইসেন্সপ্রাপ্ত হকার হিসাবে ব্যবসা করতে দেয় না। শুধুমাত্র মালয়েশিয়ানরা রাজ্য সরকারের অধীনে বিভাগ, সংস্থা এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন প্রাঙ্গণে ব্যবসায়িক লাইসেন্সসহ হকার এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ব্যবসায়িক লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারে। বিদেশিদের দ্বারা চালিত লাইসেন্সবিহীন ব্যবসায়ের পাশাপাশি বিদেশিদের দাবিদার বা বিদেশি সহায়তা নিযুক্ত হকারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

ইউএইস/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply