সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যম দুনিয়ায় বড় ধরনের ধাক্কা গেল বুধবার। হ্যাকারের কবলে বিশ্বের প্রভাবশালী ও ধনকুবেরদের টুইটার অ্যাকাউন্ট। তালিকায় রয়েছেন রাজনীতি, তথ্যপ্রযুক্তি থেকে শিল্পদুনিয়ার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। বিটকয়েন কেলেঙ্কারির সঙ্গে এই সাইবার হামলার যোগসূত্র রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। খবর বিবিসি।
এদিন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস, টেসলা-র সিইও ইলন মাস্ক, আমাজন সিইও জেফ বেজোস, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেন-সহ একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ইতিমধ্যেই ভুয়ো টুইট ছড়িয়েছে।
বিশ্বের প্রথম দশ ধনকুবেরদের তালিকায় নাম রয়েছে জেফ বেজোস, বিল গেটস, ইলন মাস্কের। তাদের টুইটার অ্যাকাউন্টে ফলোয়ার এক কোটিরও বেশি। ইলন মাস্কের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ইতোমধ্যেই ভুয়ো টুইট ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে লেখা হয়েছে, ‘আমার সমস্ত টুইটার অনুগামীদের বিটকয়েন দিতে চলেছি। তোমরা আমাকে ০.১ বিটিসি দাও, বদলে আমি তার দ্বিগুণ করে ০.২ বিটিসি ফেরত দেব।’ এমন টুইট দেখে স্বভাবতই হইচই শুরু হয়ে যায় টুইটারাইটদের মধ্যে।
এ বিষয়ে টুইটার কর্তৃপক্ষ জানায়, এই সবই ভুয়ো টুইট। কোনওভাবে প্রভাবশালীদের টুইটার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে গেছে। গোটা বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। খুব দ্রুত এই ত্রুটি মেরামত করে ফেলা হবে।
নিরাপত্তার ফাঁক গলে কীভাবে বিশ্বের তাবড় শিল্পপতি, রাজনীতিকদের টুইটার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হল এই নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে নানা মহলে। বেশিরভাগের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকেই বিটকয়েন লেনদেনের ভুয়ো প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিল গেটসের অ্যাকাউন্টে বলা হয়, আপনি যদি এক হাজার ডলার পাঠান, আপনি আপনাকে দুই হাজার ডলার ফিরিয়ে দিব। একই রকম প্রস্তাব দিয়ে টুইটার পোস্ট ছড়িয়েছে অ্যাপল, মাইক্রোসফটের অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকেও।
এছাড়া বিলিয়নিয়ার তারকা শিল্পী ক্যানি ওয়েস্ট ও তার স্ত্রী টিভি সেলিব্রিটি কিম কার্দাশিয়ানের অ্যাকাউন্টও হ্যাক করা হয়েছে। সম্প্রতি ক্যানি আসন্ন মার্কিন নির্বাচনে প্রার্থিতা ঘোষণা করেন।
বিটকয়েন কেলেঙ্কারি নিয়ে বিতর্ক বাড়তে থাকায় ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমেছেন জেমেনি ক্রিপটো কারেন্সি এক্সচেঞ্জের সহ-কর্ণধার ক্যামেরন উইঙ্কলেভস। তিনি বলেছেন, ‘এটা আসলে স্ক্যাম। এই ফাঁদে কেউ পা দেবেন না’।
সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক কোম্পানি ক্রাউডস্ট্রাইকের সহপ্রতিষ্ঠাতা দিমিত্রি আলপেরোভিচ বলেন, কোনো সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ হ্যাকের ঘটনা।
বৃহস্পতিবার ভোরে টুইটারের প্রধান নির্বাহী জ্যাক ডরসি এক টুইটে বলেন, টুইটারের জন্য সবচেয়ে কঠিন দিন। যা ঘটেছে তার জন্য আমরা সবাই বিপর্যস্ত। তিনি বলেন, আমরা সবকিছু ঘেঁটে দেখছি এবং এ সংক্রান্ত তথ্য সবার সঙ্গে শেয়ার করা হবে। আসলে কী ঘটেছে এটি আমাদের আরও বেশি বোঝার দরকার আছে।
এর মধ্যে নীল টিকচিহ্ন দেয়া ভ্যারিফায়েড অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করে দেয়ার বড় পদক্ষেপ নেয়। ভুয়া টুইটগুলো মুছে দেয়া হয়। পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার অনুরোধগুলো প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে এবং কিছু ফাংশন অকেজো করে দেয়া হয়েছে।
সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা সোশ্যাল প্রুফ সিকিউরিটি ফার্মের বিশেষজ্ঞ র্যাচেল টোবাক বলেছেন, হ্যাকাররা কোনওভাবে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের টুইটার অ্যাকাউন্টের অ্যাকসেস পেয়ে গেছে। সেখান থেকেই ভুয়ো টুইট ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই টুইটগুলোর বেশিরভাগই মুছে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে সাইবার বিশেষজ্ঞরা।
Leave a reply