গত ১৩ জুলাই ২০২০ তারিখে ভারতীয় ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ পত্রিকায় ‘BSF: Border Guard Bangladesh supports cattle smuggling’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদে গত ৬ জুলাই বিএসএফ সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার এর ডিআইজি এস এস গুলেরিয়া স্বাক্ষরিত হিন্দি ভাষায় লিখিত এক সংবাদ বিবৃতির কথা উল্লেখ করে বলা হয়, বিএসএফ দাবি করছে ভারত থেকে গরু পাচারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সম্পূর্ণভাবে সমর্থন জানাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ভারতীয় ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও বিবৃতিটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। প্রকৃতপক্ষে ভারতীয় চোরাকারবারিদের মাধ্যমে সীমান্ত এলাকায় ভারতের মাটিতে গরু সমাগম ও নদীপথে গরু পাচারে বিএসএফ এর নিষ্ক্রিয়তা/তৎপরতার অভাব নিঃসন্দেহে বিভিন্ন প্রশ্নের অবতারণা করে।
ভারতীয় গরু পাচারকারীরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় বাংলাদেশে এভাবে গরু পাচার করার কাজে অতি উৎসাহী হয়। এতে করে দেশীয় খামারগুলো প্রায়শঃ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ প্রেক্ষিতে গরু চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে এবং বিজিবি কর্তৃক সীমান্তে গবাদিপশু চোরাচালানরোধে সীমান্ত এলাকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, পুলিশ, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে জনসচেতনতামূলক সভা আয়োজন, সীমান্তবর্তী জনগণকে সাথে নিয়ে রাত্রিকালীন পাহারা দেওয়া ও সীমান্তে বিজিবি’র টহল বৃদ্ধিসহ কঠোর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। মূলতঃ গরু চোরাচালান প্রতিরোধে বিএসএফের ব্যর্থতাকে ঢাকার জন্যই ভারতীয় গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশ হতে পারে বলে অনুমেয়।
সংবাদে আরও বলা হয়, চলতি জুলাই মাসের শেষে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গরু চোরাচালান বেড়েছে। অর্থাৎ গরু পাচারের পিছনে ধর্মীয় কারণের উপস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কোরবানির ঈদে পশুর চাহিদার কথা উল্লেখ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবং প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য মতে জানা গেছে, বিগত বছরে ১ কোটির সামান্য কিছু বেশি পশু কোরবানির জন্য সারাদেশে ব্যবহৃত হয়েছে। এ বছর বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে ধারণা করা হচ্ছে এ সংখ্যা ১ কোটির কিছু কম হবে।
আসন্ন কোরবানির ঈদের জন্য আমাদের দেশে ১ কোটি ১৮ লক্ষ ৯৭ হাজার ৫০০টি পশু মজুদ রয়েছে যা প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত। তাই দেশীয় খামারিরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে লক্ষে বিদেশী গরু হতে নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশীয় খামার থেকেই কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণ করা হবে। এ প্রেক্ষিতে বিজিবি দেশের সীমান্তে গবাদি পশু চোরাচালানরোধে কঠোর নজরদারি বৃদ্ধি করেছে।
সংবাদে বিএসএফ সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার এর ডিআইজি এস এস গুলেরিয়ার বিবৃতি দিয়ে এও বলা হয়েছে, প্রাণিগুলোকে পরম যত্নের সঙ্গে লালন-পালন করা হয়, কিন্তু কোরবানি ঈদের নামে উৎসর্গ করে জবাই করার অর্থ হলো নির্যাতন করা। কথাটি ইসলাম ধর্মের বৃহত্তর ধর্মীয় উৎসব ‘ঈদ-উল-আজহা’ এর জন্য অবমাননাকর এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম আঘাত হানার সামিল।
মূলতঃ ঈদ-উল-আজহার দিন মুসলিম বিশ্ব পশু কোরবানির মাধ্যমে কুপ্রবৃত্তি বিসর্জন করে মহান আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জন করে থাকে এবং গরীব অসহায় মানুষের মাঝে মাংস বিতরণের মাধ্যমে সৌহার্দ্যের উদাহরণ তৈরি করে, যা ইসলাম ধর্মে আত্মত্যাগের প্রতীক।
ইউএইস/
Leave a reply