শরিফুল ইসলাম খান:
মাঠে রাজনীতি নেই। করোনা মহামারি এসে সভা-সমাবেশ বা কর্মসূচি মাঠ থেকে দূরে ঠেলে নিয়ে গেছে। চলছে নিরস ভার্চুয়াল আলোচনা ও দলীয় কিছু বৈঠক। বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে অনেকটােই নিরুত্তাপ রাজনীতি। এর মাঝে হঠাৎ খবর, বিএনপি নাকি জামায়াত ছাড়ছে। কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর আসে, নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো বলে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কাছে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
তবে ঐক্যফ্রন্ট বা জামায়াতকে নিয়ে নতুন করে কিছু ভাবছে না বিএনপি। স্বাভাবিক রাজনীতি ফিরলে দলীয় ফোরামে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান দলের সিনিয়র নেতারা। তারা বলছেন, এখন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করে বরং করোনা আর বন্যা দুর্গতদের পাশে থাকায় গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এসব খবরকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, জামায়াত বা অন্য দল নিয়ে এখনই এই সিদ্ধান্তে যাওয়া ঠিক হবে না। তাছাড়া, দলের মধ্যে এ ধরণের কোন আলোচনা বা সিদ্ধান্ত হয়নি। যখন সময় আসবে তখন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। যেহেতু এসব নিয়ে কোন কথাই হয়নি তাই এ বিষয়ে আলোচনার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, এখন আমাদের দৈনন্দিন কাজগুলো বন্ধ আছে। তাই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করে বরং করোনা আর বন্যা দুর্গতদের পাশে থাকায় গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
বিএনপির দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সঙ্গী জামায়াতে ইসলামী। দলটির সঙ্গে বিএনপির আদর্শিক মিল না থাকলেও দুই দশক ধরে জোট করে একই ধারার রাজনীতি করে আসছে তারা। সম্প্রীতি দুই দলের মধ্যে দূরত্ব বেড়েছে অনেকটাই। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই দূরত্বের শুরু। নির্বাচনের পরে এ দূরত্ব আরও বেড়েছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরেই জামায়াতের সঙ্গে থাকা না থাকা নিয়ে টুকটাক কথা বলেছেন দলটির সিনিয়র নেতারা। এসবের মাঝেও বিভিন্ন সময়ে জামায়াতকে বাদ দেয়ার দাবি উঠলে কৌশলি অবস্থান নেয় বিএনপি।
তবে, বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে থাকার কারণে দলটি যে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা অনেকটা জোর দিয়েই বলছেন দলটির ভাইস-চেয়ারম্যান মেজর (অবঃ) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তার মতে, ঐক্যফ্রন্ট বা জামায়াতকে সাথে নিয়ে বিএনপির খুব একটা লাভ হয়নি; বরং বিএনপির একা পথ চলা উচিত। প্রয়োজনে নির্বাচনের আগে বা পরে জোটের কথা চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে।
স্বাধীনতা যুদ্ধে জামায়েতের ভূমিকা নিয়ে শুরু থেকেই অস্বস্তিতে বিএনপি। এজন্য কেউ বাদ দিতে চান, আবার রাজনীতির নানা হিসাব নিকেষ করেন কেউ কেউ। আবার যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ থাকা জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ না থাকলে দেশের অন্য রাজনৈতিক দল ও প্রতিবেশীসহ বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক আরও ভালো থাকতো বলে মনে করেন কেউ কেউ। সেদিক থেকে আবার জামায়াতকে জোটবদ্ধ রাখার পক্ষে মেজর (অবঃ) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তবে, এজন্য মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ভূমিকা নিয়ে জামায়াতকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে বলে মত দেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান।
তার মতে, ‘প্রতিবেশী দেশ ভারত চায় না জামায়াত বিএনপির সাথে থাকুক। আওয়ামী লীগও চায় না। এই কারণে আমি চাই জামায়াত বিএনপির সাথে থাকুক। তবে একটি শর্ত আছে, তা হলো জামায়াতকে জাতির উদ্দেশ্যে বলতে হবে ৭১ সালে তাদের ভূমিকা সঠিক ছিল না; তারা ভুল করেছে। সামনের দিনগুলোতে তারা দেশের মানুষের মনোভাবকে শ্রদ্ধার সাথে বহন করে চলবে।’
এদিকে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৫ আগস্ট। পরিবারের পাশাপাশি নেতাদের ভাবনাতেও গুরুত্ব পাচ্ছে ইস্যুটি।
Leave a reply