দৃষ্টান্ত স্থাপন করা সেই নজিম উদ্দিনের বাড়ি প্রস্তুত

|

প্রস্তুত নজিম উদ্দিনের নতুন বাড়ি।

করোনা দুর্যোগ মোকাবেলায় গঠিত তহবিলে নিজের সঞ্চিত সকল অর্থ দান করে দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন হতদরিদ্র নজিম উদ্দিন। ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন চালানো শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গান্দিগাও গ্রামের এই বৃদ্ধ দুই টাকা, পাঁচ টাকা দিয়ে তিনবছর ধরে তিলে তিলে জমিয়েছেন দশ হাজার টাকা। ইচ্ছে ছিল কুড়ে ঘরটি সংস্কার করবেন।কিন্তু পরের তরে সেই ইচ্ছের জলাঞ্জলি দিলেন। শীর্ণ দেহের মানুষটির এই মহানুভবতার গল্প পৌঁছে যায় প্রধানমন্ত্রীর কাছেও। তার নির্দেশেই নজিম উদ্দিনকে তুলে দেয়া হলো বাড়ি।

ঘটনাটি গত এপ্রিলের। করোনা দুর্যোগের মধ্যে হতদরিদ্রদের সহায়তার জন্য তালিকা করছিলেন একটি স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যরা। ঝিনাইগাতীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদের নেতৃত্বে চলছিল এ কর্মযজ্ঞ। এই কাজে ভিক্ষুক নজিম উদ্দীনের বাড়িতে যান স্বেচ্ছাসেবকরা। নজিম তাদের কাছে জানতে চান কেনো এই তালিকা? জানতে পারেন, সরকারের খাদ্য ও অর্থ সহায়তা দেয়ার জন্য এ তালিকায় তার নাম দেওয়া হবে। নজিম বলে ওঠেন, আগে মানুষের জীবন বাঁচুক। এই বলে তিনি ঘর তোলার জন্য জমানো দশ হাজার টাকার পুরোটাই তুলে দেন বিপদগ্রস্ত মানুষের কল্যাণে। বিষয়টি হতবাক করে তোলে ইউএনও, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ উপস্থিত সবাইকে।

নিজের সঞ্চিত সবটুকু অর্থ করোনাকালীন সহায়তা কর্মসূচিতে দান করেছিলেন নজিম উদ্দিন।

ভিক্ষুক নজিম উদ্দীন সে সময় যমুনা নিউজকে বলেন, বাড়িতে আমার প্রতিবন্ধী বউ আছে। আমি খেতে পারি না ঠিকমতো। মানুষের বাড়ি থেকে চেয়ে খাই। কিন্তু, আমার কাছে তো কিছু টাকা আছে, অনেকেরতো তাও নাই। মানুষ যদি না বাঁচে তো আমার বাড়ি দিয়ে কী হবে? আর আমার বয়স হয়েছে, মরে গেলে এই টাকা দিয়ে কী করবো?

এ ঘটনা জানতে পেরে নজিম উদ্দিনের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, সারাবিশ্বে মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন নজিম উদ্দিন। এমন মানবিক গুণ বিত্তশালীদের মাঝেও দেখা যায় না। একজন নিঃস্ব মানুষ যার কাছে টাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। যিনি ওই টাকা দিয়ে জামা কাপড় কিনতে পারতেন, খাবার কিনতে পারতেন। এ অবস্থায় ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা পাওয়াও মুশকিল। তারপরও তিনি কোন চিন্তা করেননি। শেষ সম্বলটুকু দান করেছেন। নজিম উদ্দিন যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তার কাছে আমাদের অনেক অনেক শেখার আছে।

এরপর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নজিম উদ্দিনকে বাড়ি করে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। তার চিকিৎসা ভারের পাশাপাশি জীবিকা নির্বাহের জন্য দোকান করে দেয়ার কথা জানানো হয় সরকারের তরফে।

নজিম উদ্দিনের বাড়ি প্রস্তুত।

ঝিনাইগাতীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ জানান, গত ১ মে শুরু করে ২ মাসের মধ্যে প্রস্তুত হয়ে যায় নজিম উদ্দিনের নতুন বাড়ি। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর তরফে ৩ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হয়। এর পাশাপাশি, নজিম উদ্দিনকে করে দেয়া হচ্ছে দোকানও।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply