ইউটিউবে বেশ বড়সড় তারকা তিনি। সেখানে চ্যানেল খুলেছেন একটা। এএইচপি টিভি। এএইচপি- মানে আহসান হাবিব পেয়ার। হাজার হাজার ফলোয়ার। লাখে লাখে ‘ভিউ’। কমেন্ট থ্রেডে ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘মাশাআল্লাহ’ লেখা দর্শকের লাইন। তার চ্যানেলের ভিডিওগুলোতে আবেগের ছড়াছড়ি। ধর্মীয় আবেগ, মানবিকতা-সহযোগিতার আবেগ, আরও কত আবেগী বিষয় ভিডিগুলোতে! দর্শকের সস্তা আবেগকে পুঁজি করে রমরমা ব্যবসা। ভিডিওতে হিট হলে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে কিছু আয় আসে বৈধ পথে। তবে পিয়ারের বেশিরভাগ আয়ই প্রতারণার মাধ্যমে, তার আবেগী দর্শকদের কাছ থেকে। সেই দর্শকদের একাংশের কাছে তিনি আবার ‘পীর’ বলেও পরিচিত ও সম্মানীত!
‘ইউটিউট সেলিব্রিটি’ তকমাকে কাজে লাগিয়ে ‘পীর’ পরিচয়ের আড়ালে পিয়ার কী কী কাণ্ডে লিপ্ত আছেন তা বের হয়ে এসেছে অবশেষে। জিন-ভূত তাড়ানোর নামে তরুণীদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়তেন। আবার সেসবের ছবিও তুলতেন। ধারণ করতেন ভিডিও। এরপর ছবি/ভিডিওর ব্যবহার করে ব্লাকমেইল করে যেতেন ভুক্তভোগী মেয়েদেরকে। এভাবে টাকাও আদায় করেছেন কয়েকজন মেয়ের কাছ থেকে।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে পেয়ারকে মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর উত্তরা থেকে তাকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগ পেয়ে তাকে গ্রেফতারের আগে থেকেই যমুনা টেলিভিশনের ”ইনভেস্টিগেশন থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি” টিম পেয়ারের কর্মকাণ্ড নিয়ে অনুসন্ধানে নামে। তাতে উঠে আসে মেয়েদের সাথে সম্পর্ক করে পরে ব্লাকমেইল করার বিভিন্ন প্রমাণ। শুধু তাই নয়, দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত দরিদ্র মানুষের সহায়তার টাকাও আত্মসাতেরও প্রমাণ মিলেছে পেয়ারের বিরুদ্ধে।
নিজেকে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক দাবি করেন আহসান হাবিব পেয়ার। তার ইউটিউব চ্যানেল প্রচার করেন নানা প্রতিবেদন। মূল উপজীব্য ধর্ম ও মানবিক আবেগ। দুরোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত দরিদ্র কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে নিজের মতো প্রতিবেদন তৈরি করে মানুষের কাছে সহায়তা চান। ‘পীর’ আমেজ ও ইসলামী বেশভুষা দেখে অনেকেই বিশ্বাস করেন তাকে। কিন্তু রোগীকে সহায়তার টাকার সিংহভাগই যেতো পেয়ারের পকেটে।
দুইজন নারী ভুক্তভোগী অভিযোগ জানান যমুনা টিভির কাছে। তাদের উভয়ের সাথেই রীতিমতো ‘প্রেমের’ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে পীর সাহেব।
এরপর তাদের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ভিডিও করে রাখেন। দীর্ঘদিন সেই ভিডিওগুলো দিয়ে চলে ব্লাকমেইল।
পেয়ারের ব্যক্তিগত কম্পিউটার থেকে উদ্ধার করা হয় শতাধিক পর্ন ভিডিও। পাওয়া যায় বিভিন্ন ব্যাংকের একাউন্টে লাখ লাখ টাকা পাওয়ার ডকুমেন্ট, যেগুলো তিনি রোগীদের সহায়তার কথা বলে এবং কয়েকজন মেয়েকে ব্ল্যাকমেইল করে হাতিয়ে নিয়েছেন।
এএইচপি টিভিতে বিভিন্ন প্রতিবেদন করার ক্ষেত্রেও প্রতারণার আশ্রয় নিতেন এই ভণ্ড পীর। তার চ্যানেল প্রায় সাড়ে ৯ লাখ ‘ভিউ’ হওয়া একটি ভিডিও শিরোনাম হচ্ছে, “সারা বিশ্বের সেরা ভিডিও অবাক হবেন আপনিও রিক্সার ড্রাইভার কি ভাবে পারলেন?” যেটিতে দেখা যায়, ঢাকার কোনো এক রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে একজন রিকশা চালককে পিয়ার অনুরোধ করছেন কুরআন তেলাওয়াত করার। ভিডিওর ফুটেজে দেখা যায় রিকশা চালক তেলাওয়াত করছিলেনও।
কিন্তু পরে পেয়ার ভিডিওতে সেই চালকের তেলাওয়াতের বদলে অন্য একজন ক্বারীর তেলাওয়াতের অডিও যুক্ত করে দিয়েছেন। সেই অডিওতে স্পষ্ট শোনা যায় প্রতিটি আয়াত শেষ হওয়ার পর দর্শকরা ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি তুলছেন। ওইদিকে রিকশা চালকের সাথে পেয়ার ছাড়া আর কোনো দর্শক ছিলেন না ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি দেয়ার জন্য।
এভাবে চটকদার শিরোনামের বিভিন্ন ভিডিওর মাধ্যমেও তার দর্শকদের সাথেও প্রতারণা করে আসছিলেন ভণ্ড পেয়ার।
/কিউএস
Leave a reply