সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার শাহজাহানপুর গ্রামের পাশে স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে
ভেদুরিয়া বিলে বছরে তিনবার ফসল উৎপাদন আর সম্ভব হচ্ছে না। শুধুমাত্র ইরি বোরো
মৌসুমে একবার ধান উৎপাদন করতে পারছেন বিলের জমির মালিকগণ।
স্থানীয় কৃষি বিভাগের জরিপে এই বিলের জমির মালিকেরা বছরে অর্ধ কোটি টাকার ফসল প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ৫’শ ফুট দীর্ঘ একটি খাল খনন করা সম্ভব হলে পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে বিলের জমিতে বছরে তিনবার ফসল উৎপাদন সম্ভব হতো। তবে এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বা সরকারে পক্ষ থেকে নেই কোন উদ্যোগ। জলাবদ্ধতায় কচুরি পানায় আটকে আছে কৃষকে স্বপ্ন। সিরাজগঞ্জে এবার দীর্ঘ মেয়াদী বন্যা ও প্রবল বর্ষণের কারণে অনেক ফসল নষ্ট হয়ে জমিতেই পচে গেছে। আশ্বিনের শুরুতেই এই বিলে সরিষার চাষ শুরু করতো কৃষক। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক বছরে টানা বর্ষণ আর বন্যার পানি আটকে থাকায় চাষ করতে পারছেনা এই বিলের কৃষকরা।
শাহজাহানপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম, বরাত আলী, ঘাটিনা গ্রামের মো. সজল, মবিল
উদ্দিন, হাবিবগঞ্জ গ্রামের আব্দুল হালিমসহ অনেক কৃষক অভিযোগ করেছেন, বেশ কয়েক যুগ ধরে ভেদুরিয়া বিলে বছরের ৮ মাস পানি পূর্ণ থাকে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বিলের অন্তত অর্ধশত কৃষক বছরে একবার ফসল উৎপাদন করতে পারছেন।
শাহজাহানপুর গ্রামের দক্ষিণে করতোয়া খালের সঙ্গে একটি পানি নিষ্কাশন খাল খনন করা
সম্ভব হলে বিলের জলাবদ্ধতা দূর করা যেত। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তারা সংশ্লিষ্ট সলপ ইউনিয়ন পরিষদ ও উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে এ ব্যাপারে আবেদন
নিবেদন করেও কোন ফল পাননি। ফলে বছরে দুটি করে ফসল উৎপাদন করার কোন সুযোগ নেই তাদের।
অভিযোগকারীরা আরও জানান, বিলের দক্ষিণ পাশে প্রস্তাবিত নিষ্কাশন খালের জমিগুলো সবই ব্যক্তি মালিকানাধীন হওয়ায় নিষ্কাশন, খাল খনন দুরূহ হয়ে পড়েছে। বিলের পানি বের হবার কোন পথ না থাকায় পুরো বিল জুড়ে কচুরি পানায় পরিপূর্ণ হয়ে থাকে। ফলে ইরি বোরো মৌসুমে চাষাবাদের সময় তাদেরকে মোটা অংকের টাকা ব্যয় করে কচুরিপানা অপসারণ করতে হয়। এসব কৃষক অবিলম্বে ভেদুরিয়া বিল থেকে পার্শ্ববর্তী করতোয়া খাল পর্যন্ত একটি পানি নিষ্কাশন খাল খননের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে সলপ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী শওকাত ওসমানের সঙ্গে কথা বললে তিনি ভেদুরিয়া বিলে জমির মালিকদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে জানান, পানি
নিষ্কাশন খাল খননের প্রস্তাবিত জায়গাগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন। এদের সঙ্গে কথা বলে
স্বল্পমূল্যে তাদের জায়গা নেবার ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আজমল হক জানান, ইতোমধ্যে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবর্ণা ইয়াসমিন সুমি এবং তিনি ভেদুরিয়া বিল পরিদর্শন করেছেন। এখানকার জমি মালিকরা প্রতিবছর কৃষি দফতরের জরিপ অনুযায়ী অর্ধ কোটি টাকার ফসল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কৃষি বিভাগ এখানে পানি নিষ্কাশনের ব্যাপারে একটি প্রকল্প প্রণয়ন করে কৃষকদের দীর্ঘদিনের সমস্যা দূর করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
Leave a reply