নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য প্রতিনিধি সম্মেলন আহবানকে কেন্দ্র করে আবারও অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে হেফাজতে ইসলামে। সংগঠনটির প্রয়াত আমীর আহমদ শফীর অনুসারীরা এই সম্মেলনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের অভিযোগ, হেফাজতের নেতৃত্ব দ্বিখণ্ডিত ও কুক্ষিগত করার চেষ্টা করছে বিএনপি-জামায়াতপন্থীরা। অন্যদিকে, সম্মেলন আয়োজকদের দাবি, প্রতিনিধি সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের সংগঠনের নেতাকর্মীরা আরও ঐক্যবদ্ধ হবে।
শনিবার সম্মেলনের বিরোধিতা করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করেছে শফিপন্থীরা।
ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশকে দ্বিখণ্ডিত ও কুক্ষিগত করার ষড়যন্ত্র চলছে। কিছু চরমপন্থী ও উগ্রবাদী এর নেতৃত্বে রয়েছে। তারা আলাম্মা শাহ আহমদ শফিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিচার করতে হবে। এজন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আল্লামা আহমদ শফীর সন্তান মাওলানা আনাস মাদানীসহ শফিপন্থী নেতারা। তারা বলেন, চরমপন্থীরা এখন হেফাজতে ইসলাম দখলের চেষ্টা করছে। কিন্তু সেই চেষ্টা প্রতিহত করা হবে। একতরফা কাউন্সিলের মাধ্যেম হেফাজতের কমিটি গঠনের চেষ্টা চলছে। এটা মানা হবে না। নিয়মতান্ত্রিকভাবে কেন্দ্রীয় কমিটির মাধ্যমে গঠনতান্ত্রিকভাবে কাউন্সিল করতে হবে। হেফাজতের কাউন্সিলে সর্ব সমর্থিত ব্যক্তিত্বদের নেতৃত্বে আনতে হবে।
এদিকে, রোববার অনুষ্ঠিতব্য হেফাজতে ইসলামের কাউন্সিল স্থগিত চেয়ে চট্টগ্রামেও সংবাদ সম্মেলন করেছে হেফাজতে ইসলামের একাংশের নেতাকর্মীরা। শনিবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মাইনুদ্দীন রুহীর নেতৃত্বে এ সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন প্রয়াত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন।
লিখিত বক্তব্যে মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন দাবি করেন, হেফাজতের দায়িত্ব জামায়াত-শিবিরের হাতে তুলে দিতেই একটি অংশ এ সম্মেলনের ডাক দিয়েছে। তাদের দাবি, সংগঠনের একটি পক্ষ আল্লামা শাহ আহমদ শফী পুত্র আনাস মাদানীকে হত্যার হুমকি দেয়ায় তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও জীবননাশের হুমকির মধ্যে আছেন বলে জানান তিনি।
সংগঠনটির চট্টগ্রাম মহানগরী শাখার সাধারণ সম্পাদক মাইনুদ্দীন রুহী দাবী করেন, সংগঠনের নিয়ম না মেনে আগামীকালের কাউন্সিল ডাকা হয়েছে। তাই এ কাউন্সিল স্থগিতের দাবি জানান তিনি।
উল্লেখ্য, বেশ কিছুদিন ধরেই নেতৃত্বের অন্তর্কোন্দলে জর্জরিত হেফাজতে ইসলাম। এর জেরে একাংশের নেতা মাওলানা জুনায়েদ বাবু নগরীকে গত ১৭ জুন হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। আর আল্লামা শাহ আহমদ শফী মাদ্রাসার আমৃত্যু মহাপরিচালক থাকবেন এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যদিও পরবর্তীতে ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে গত ১৭ সেপ্টেম্বর মহাপরিচালকের পদ থেকে সরে দাঁড়ান আল্লামা শফী। তার পুত্র আনাস মাদানীকে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরদিন মারা যান আল্লামা শফী। এতে, দু’পক্ষের অন্তর্কোন্দল দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিয়েছে বলে মনে করছেন আলেমরা।
Leave a reply