আমি আমির হতে চাইনি, সিনিয়ররা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন: বাবুনগরী

|

নিজে থেকে নয়, বরং সংগঠনের সিনিয়ররাই দায়িত্ব দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত আমির জুনাইদ বাবুনগরী।

রোববার দুপুরে চট্টগ্রামের হাটহাজারী দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় ১৫১ সদস্যর কমিটি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি। এতে, মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরীকে আমির ঘোষণা করা হয়েছে। আর সংগঠনটির নতুন মহাসচিবের দায়িত্ব পেয়েছেন বিগত কমিটির ঢাকার আমির মাওলানা নূর হোসেন কাসেমী।

উল্লেখ্য, আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানী ও তার অনুসারীদের ছাড়াই ঘোষণা করা হয়েছে হেফাজতে ইসলামের কমিটি।

বাবুনগরী বলেন, আমি আমির হতে চাইনি। সংগঠনে যারা সিনিয়র আছেন তারা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি আমার দায়িত্ব অবশ্যই নিষ্ঠার সাথে পালন করার চেষ্টা করবো।

তিনি আরও বলেন, যারা ইসলাম বিরোধী, যারা কাদিয়ানী তাদের বিরুদ্ধে হেফাজতের যে আন্দোলন- সেই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। ইসলামের বিরোধীতাকারীদের যেকোনভাবেই রুখে দেয়া হবে। একইসাথে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনে সবাইকে পাশে থাকার আহ্বানও জানান তিনি।

রোববার সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া সম্মেলনে মাদ্রাসার শিক্ষা ভবনের তৃতীয় তলায় সারা দেশ থেকে সংগঠনটির প্রায় ৪০০ প্রতিনিধি অংশ নেন। এতে সভাপতিত্ব করেছেন আল্লামা শফীর জীবদ্দশায় হেফাজত থেকে পদত্যাগকারী সংগঠনটির সিনিয়র নায়েবে আমীর আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী।

প্রতিষ্ঠার প্রায় ১০ বছর এবং হেফাজতের আমীর আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর প্রথমবারের মতো এ কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এদিকে, নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য প্রতিনিধি সম্মেলন আহবানকে কেন্দ্র করে আবারও অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে হেফাজতে ইসলামে। সংগঠনটির প্রয়াত আমীর আহমদ শফীর অনুসারীরা এই সম্মেলনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের অভিযোগ, হেফাজতের নেতৃত্ব দ্বিখণ্ডিত ও কুক্ষিগত করার চেষ্টা করছে বিএনপি-জামায়াতপন্থীরা। অন্যদিকে, সম্মেলন আয়োজকদের দাবি, প্রতিনিধি সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের সংগঠনের নেতাকর্মীরা আরও ঐক্যবদ্ধ হবে।

গত শনিবার সম্মেলনের বিরোধিতা করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করেছে শফিপন্থীরা। ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশকে দ্বিখণ্ডিত ও কুক্ষিগত করার ষড়যন্ত্র চলছে। কিছু চরমপন্থী ও উগ্রবাদী এর নেতৃত্বে রয়েছে। তারা আলাম্মা শাহ আহমদ শফিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিচার করতে হবে। এজন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আল্লামা আহমদ শফীর সন্তান মাওলানা আনাস মাদানীসহ শফিপন্থী নেতারা। তারা বলেন, চরমপন্থীরা এখন হেফাজতে ইসলাম দখলের চেষ্টা করছে। কিন্তু সেই চেষ্টা প্রতিহত করা হবে। একতরফা কাউন্সিলের মাধ্যেম হেফাজতের কমিটি গঠনের চেষ্টা চলছে। এটা মানা হবে না।

এদিকে, রোববার অনুষ্ঠিতব্য হেফাজতে ইসলামের কাউন্সিল স্থগিত চেয়ে চট্টগ্রামেও সংবাদ সম্মেলন করেছে হেফাজতে ইসলামের একাংশের নেতাকর্মীরা। শনিবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মাইনুদ্দীন রুহীর নেতৃত্বে এ সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন প্রয়াত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন।

লিখিত বক্তব্যে মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন দাবি করেন, হেফাজতের দায়িত্ব জামায়াত-শিবিরের হাতে তুলে দিতেই একটি অংশ এ সম্মেলনের ডাক দিয়েছে। তাদের দাবি, সংগঠনের একটি পক্ষ আল্লামা শাহ আহমদ শফী পুত্র আনাস মাদানীকে হত্যার হুমকি দেয়ায় তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও জীবননাশের হুমকির মধ্যে আছেন বলে জানান তিনি।

সংগঠনটির চট্টগ্রাম মহানগরী শাখার সাধারণ সম্পাদক মাইনুদ্দীন রুহী দাবি করেন, সংগঠনের নিয়ম না মেনে কাউন্সিল ডাকা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বেশ কিছুদিন ধরেই নেতৃত্বের অন্তর্কোন্দলে জর্জরিত হেফাজতে ইসলাম। এর জেরে একাংশের নেতা মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরীকে গত ১৭ জুন হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। আর আল্লামা শাহ আহমদ শফী মাদ্রাসার আমৃত্যু মহাপরিচালক থাকবেন এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যদিও পরবর্তীতে ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে গত ১৭ সেপ্টেম্বর মহাপরিচালকের পদ থেকে সরে দাঁড়ান আল্লামা শফী। তার পুত্র আনাস মাদানীকে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরদিন মারা যান আল্লামা শফী। এতে, দু’পক্ষের অন্তর্কোন্দল দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিয়েছে বলে মনে করছেন আলেমরা। আজকের সম্মেলন তাতে আরও নতুন মাত্রা যোগ করেছে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply